গাজায় অনাহারী মানুষ বেপরোয়া, তার ওপর ইসরাইলি হামলা

  24-02-2024 03:31PM


পিএনএস ডেস্ক: গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়স্থলে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধিরা বলছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে আর কোনো সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এর কারণ, তাদের স্টাফ সংখ্যা কম এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষের ওপর ইসরাইলের নৃশংস হামলা এবং তাদের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাদ্য পৌঁছানোর বিরুদ্ধে বিধিনিষেধের কারণে মানুষগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কারণ, তাদের কাছে খাবার নেই। অনাহারী মানুষ বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছেন। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে কাতার। তারা বলেছে, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুরোধে পঞ্চম দিনের মতো শুক্রবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি করেছে আইসিজে।

ওদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধপরবর্তী গাজা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তার এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নৃশংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৯,৫১৪ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৬১৬ জন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ দেয়ার কারণেই সে মানবাধিকার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক সিন বেল বলেন, ইসরাইলকে বার্ষিকভিত্তিতে প্রায় ৩৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলকে কমপক্ষে ২১,০০০ ‘প্রিসিশন-গাইডেড’ অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছে ওয়াশিংটন। রাফায় স্থল অভিযানের যে হুমকি দিয়েছে ইসরাইল, তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভীষণ রকমভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ, এই যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, শুক্রবার রাতটা মধ্য ও দক্ষিণ গাজার জন্য ছিল একটি ভয়াবহ ও রক্তাক্ত রাত। রাতভর সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। শনিবার ভোরে দিয়ের আল-বালাহ’তে বাড়ির ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। ওই বাড়িগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন কমপক্ষে ১২০ জন মানুষ। বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখানে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। মারাত্মক আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে পাঠানো হয়েছে আল আকসা হাসপাতালে। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওদিকে গাজায় দায়িত্ব পালনকারী একজন চিকিৎসক মুসা আবদুল খালিক এর আগে ইউক্রেনে মেডিকেল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। ইউক্রেন এবং গাজা এই দুটি যুদ্ধক্ষেত্রের বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের রোগীদেরকে শুধু সুস্থ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কিন্তু দিয়ের আল-বালাহতে আল আকসা হাসপাতালে সরঞ্জামের সঙ্কটের কারণে তাকে রোগীর জীবন বা মৃত্যু একটি বেছে নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়ার সঙ্কট তীব্র। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের বিভিন্ন হাসপাতালে এক বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু গাজার পরিস্থিতি পুরো আলাদা। এই যুদ্ধ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। হত্যা করছে এবং ধ্বংস করে দিচ্ছে গাজাবাসীকে। মৃতদেহে সয়লাব গাজা। সঙ্কটজনক আহতদের চিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। যদি আমরা দ্রুততার সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখবো ইউক্রেনে বহু হাসপাতাল আছে। সেগুলো আকারে বড় এবং সরঞ্জামে সুসজ্জিত।

ইসরাইল সম্প্রতি আরও কমপক্ষে ৩০০০ নতুন অবৈধ বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি নগ্ন চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সত্যয়ে। তিনি আরও বলেন, এটা হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অসম্মান। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন এই বসতি স্থাপন শুরু হওয়ার কথা। দখলিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের মা’লে অডামিমে তা নির্মাণ করার কথা। পিস নাউ নামের পর্যবেক্ষক সংস্থা বলছে, ২০২৪ সালের বাজেটে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে ১০ কোটি ডলার রাখা হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন