জমাদিউল আউয়াল মাসে করণীয়

  22-11-2023 09:53AM



পিএনএস ডেস্ক: হিজরি সনের পঞ্চম মাস ‘জমাদিউল আউয়াল’। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’, যা হিজরি সালের ষষ্ঠ মাস। আরবিতে মাস দুটিকে জুমাদাল উলা বা প্রথম জুমাদা এবং জুমাদাস সানিয়াহ বা দ্বিতীয় জুমাদাও বলা হয়। ‘জুমাদা’ অর্থ স্থির, অবিচল, দৃঢ়, কঠিন; জমাটবদ্ধ, নিস্তব্ধ, নীরব, নিথর, শুষ্ক, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত; শীতল, শীতকাল, শীতবস্ত্র; কার্পণ্য, বদ্ধমুষ্টি; কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অস্থির সময়, চিন্তাযুক্ত অবস্থা।

তৎকালীন আরবে এই দুই মাসে প্রচণ্ড শীতে তরল পানি জমে কঠিন বরফে পরিণত হতো, জড়ো পদার্থগুলো জমে শক্ত হয়ে যেত, উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে থাকত, প্রাণীরা নীরব হয়ে যেত, তাই এই মাস দুটির নামকরণ এভাবে করা হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশে মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত।

দেশে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) জমাদিউল আউয়াল মাস শুরু হয়েছে। ইসলামে অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেও নেক আমল তথা নফল ইবাদত, নফল রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদের অনেক মূল্য রয়েছে।

যেসব দিবসের ও যেসব মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সেই দিন ও মাসগুলোতে সাধারণত সবাই ইবাদত করে থাকেন, কিন্তু যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কোরআন–হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, তাতে অধিক হারে নেক আমল করলে আমলকারীরা অগ্রগামী হবেন—এতে সন্দে নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা নেক আমলের প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৪৮)

তাই জমাদিউল আউয়ালে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত ইত্যাদি নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আর যেহেতু শীত শুরু হয়েছে, কাজা রোজা থাকলে এই মাসে তা পুরা করা সহজ হবে; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা যাবে। এছাড়াও প্রতি সোম-বৃহস্পতিবার এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’–এর সুন্নত রোজা রাখা প্রতিমাসের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ আমল।

জমাদিউল আউয়াল মাসে এসব রোজা রেখে অনেক ফজিলত লাভ করা যাবে। নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ২৫৬৫, খণ্ড-৬)

আরও ইরশাদ হয়েছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে আসমান ও জমিনের দূরত্ব সমপরিমাণ খন্দক তৈরি করে দেবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৫৬৩, খণ্ড-২)

জমাদিউল আউয়াল ও জমাদিউস সানিকে মূল্যহীন বিবেচনা করে হেলায় কাটিয়ে দেওয়া কখনও উচিত হবে না। এমনটি যাদের অভ্যাস, হাশরের দিনে তাদের সময়ের অপচয়ের জন্য অনুশোচনা করতে হবে। মানুষের জীবন আসলে কিছু দিনের সমষ্টি মাত্র। একটি দিন চলে যাওয়ার অর্থ জীবনের একটি অংশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।

অসংখ্য হাদিসে সময়কে মূল্য দেওয়ার এবং জীবনের গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩৫৪৬০)

এমনকি জান্নাতের অনন্ত সুখের জায়গায় গিয়েও মানুষ অবহেলায় হারিয়ে ফেলা সময়ের কারণে আফসোস করবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘জান্নাতের অধিবাসীগণ দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবে না। শুধু সেই সময়গুলোর জন্য আফসোস করবে, যা আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।’ (তাবারানি: ২০/৯৩; তারগিব: ২/৩৭৫)

তাছাড়া শীত ও গরমের মৌসুমে বিশেষ ইবাদত প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কোরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।’(সুরা কুরাইশ: ১-৪)

মূলত মুমিনের এই চেতনা থাকা উচিত যে নেক আমলের জন্য কোনো মৌসুমই মূল্যহীন নয়। সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সময়ের শপথ! নিশ্চয় মানুষ রয়েছে নিশ্চিত ক্ষতিতে। তারা ব্যতীত যারা ইমান এনেছে, আর নেক আমল করেছে। এবং একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে ও একে অন্যকে ধৈর্যে উৎসাহ জুগিয়েছে।’ (সুরা আসর: ১-৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়ের মূল্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। অন্যান্য মাসের মতো জমাদিউল আউয়াল মাসও ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন