পিএনএস ডেস্ক: বুখারি শরিফের হাদিস থেকে জানা যায়, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরবাসীগণ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামদের বললেন, তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতিরেকে এ জাতির এলাকায় প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদের ক্রন্দন না আসে, তবে তোমরা তাদের এলাকায় প্রবেশই করবে না। হয়ত, তাদের ওপর যা ঘটেছিল তা তোমাদের ওপরও ঘটতে পারে’। (বুখারি ৪৭০২)
এ হাদিসে সালেহ (আ.) এর সম্প্রদায়ের কথা বলা হচ্ছে। এ এলাকায় বাস করতো প্রবল শক্তির অধিকারী সালেহ (আ.) এর সম্প্রদায়। তারা পাথর কেটে নিজেদের বাসস্থান তৈরি করত। তাদেরকে বলা হতো সামুদ জাতি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ জাতির কাছে আল্লাহ রব্বুল আলামিন সালেহ (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন।
সালেহ আ. ছিলেন নুহ (আ.) এর ছেলে সামের বংশধর। তার সম্প্রদায়ের নাম ছিল সামুদ। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে তাদের বসবাস ছিলো। এ জায়গাটিকে বলা হয় ‘মাদায়েনে সালেহ’। সামুদ জাতি ছিল শক্তিশালী ও বীরের জাতি। প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় তাদের বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। পর্বত খোদাই করে তারা বাসস্থান নির্মাণ করত। মাদায়েনে সালেহ অঞ্চলে এখনও সেই আমলের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলি ও সামুদি শিলালিপি বিদ্যমান রয়েছে।
সামুদ জাতিও প্রথমে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এক সময় আল্লাহ ও পরকালকে ভুলে যায়। মূর্তিপূজা শুরু করে। শিরকে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের হেদায়েতের জন্য সালেহ (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। নবুয়ত লাভের পর তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান করেন।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তিনিই জমিন হতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন। অতএব, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তারই দিকে ফিরে চলো। আমার পালনকর্তা নিকটেই আছেন। কবুল করে থাকেন, সন্দেহ নেই।’ (সূরা: হুদ, আয়াত: ৬১)
সালেহ (আ.) তাদেরকে মূর্তিপূজার কঠিন পরিণতির কথা বলতেন। আখেরাতের কথা শোনাতেন। জান্নাতের নেয়ামতরাজির কথা বলে আল্লাহর পথে চলে আসতে বলতেন। জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করতেন। কিন্তু তারা কেউ সালেহ (আ.) এর দাওয়াত গ্রহণ করলো না। তারা সালেহ (আ.)-কে বললেন, ‘হে সালেহ! ইতঃপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ করো? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান করছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, মন মোটেই সায় দিচ্ছে না’। (সূরা: হুদ, আয়াত: ৬২)
সালেহ (আ.) তাদেরকে বিভিন্নভাবে উপমা ও দৃষ্টান্ত বলে বলে বোঝাতে থাকলেন। বললেন, দুনিয়া চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়। এখানকার ভোগবিলাস ক্ষণিকের মাত্র। সুতরাং তোমরা পরকালের চিন্তা করো।
একদিন সামুদ জাতি সবাই একত্রিত হয়ে সালেহ (আ.)-কে বলল, আপনি যদি সত্যি আল্লাহর নবী হন তবে আমাদেরকে কাতেবা পাহাড়ের ভেতর থেকে দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবতী উটনি বের করে দেখান। সালেহ (আ.) তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার নিলেন, যদি আমি তোমাদের দাবি পূরণ করতে পারি তাহলে তোমরা আমার প্রতি ও আমার দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কি না? সবাই এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করলেন। সেই পাহাড় ফেটে ভেতর থেকে তাদের দাবির অনুরূপ একটি গর্ভবতী উটনি বের হয়ে এলো।
এই অলৌকিক উষ্ট্রী দেখে উপস্থিত অনেকেই হজরত সালেহ (আ.) এর ওপর ঈমান নিয়ে আসে। কিন্তু এমন প্রকাশ্য মুজেজা প্রত্যক্ষ করেও কিছু হতভাগা ঈমান আনল না। সালেহ আ) তাদের সতর্ক করে বললেন, ‘আল্লাহর এই উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। অতএব, তাকে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করতে দাও এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করো না। নতুবা অতিসত্বর তোমাদেরকে আজাব পাকড়াও করবে’। (সূরা: হুদ, আয়াত: ৬৪) কিন্তু গোত্রের কিছু খারাপ লোক মিলে এই অলৌকিক প্রাণীটি হত্যা করে ফেলে। হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হলো না, সালেহ (আ.) এর কাছে এসে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলল, তুমি সত্যিকারের রাসূল হলে তোমার প্রতিশ্রুত আজাব আনো দেখি! আমরা তো উষ্ট্রীটি হত্যা করেছি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর শাস্তি নেমে আসে।
আল্লাহ তাআলা সেই অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল, স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে সালেহ! নিয়ে এসো যা দ্বারা আমাদের ভয় দেখাতে, তুমি যদি রাসূল হয়ে থাকো। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকালবেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল’। (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৭৭-৭৮)
অন্য আয়াতে আছে, তাদের ওপর প্রচণ্ড ও বিকট শব্দবোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সামুদ সম্প্রদায়ের ওপর একই সঙ্গে ভূমিকম্প ও বিকট গর্জন এসেছিল এবং তারা এই দুটি শাস্তিতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন শক্তিধর সামুদ জাতির পাথরে তৈরি করা বাড়ি ঘর বিশ্ব মানুষের জন্য রেখে দিয়েছেন। যেনো মানুষ এসব দেখে আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকে।
পিএনএস/ সোহান
আল্লাহর নাফরমানিতে সামুদ জাতির যে কঠিন পরিণতি হলো
23-11-2023 08:34PM