প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়া ইসলামের আদর্শ

  14-02-2024 08:34PM

পিএনএস ডেস্ক: উদার মানবতা ও পরম সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম। মা-বাবা, স্বজন-পরিজন এবং সমাজের সর্বস্তরে মানুষের সঙ্গে ইসলাম মানবতার শিক্ষা দেয়। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান সব শ্রেণির প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ, সহিষ্ণুতা ও সহযোগিতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। মহান প্রভু আল কোরআনে তাঁর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রে উদারতা অবলম্বনের প্রতি আহ্বান করেছেন।

তিনি ঘোষণা করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করবে না, আর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে।’ (সুরা আন নিসা আয়াত ৩৬)। মহানবী (সা.) প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রতিবেশীর প্রতি সদয় আচরণ করাকে তিনি প্রতিটি ইমানদারের একান্ত অপরিহার্য দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

তিনি ফরমান, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে সে যেন উত্তম বলে অথবা চুপ থাকে। আর যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদয় আচরণ করে এবং যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।’ (মুসলিম)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি)। রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কসম ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। কসম ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। কসম ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। যার অনিষ্টতা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, মুসলিম)।

অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)। রসুলুল্লাহর (সা.) কাছে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, সে ব্যক্তি নামাজ, রোজা ও দান-অনুদানের ক্ষেত্রে অনেক প্রসিদ্ধ। কিন্তু সে তার কথার মাধ্যমে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। তার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সে জাহান্নামি’। (আহমদ, বায়হাকি)।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) প্রতিবেশীর ব্যাপারে এমনভাবে প্রতিনিয়ত গুরুত্বারোপ করছিলেন, আমার ধারণা হচ্ছিল যে হয়তো প্রতিবেশীকে সম্পদে উত্তরাধিকার করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার পরিণাম অনেক ভয়াবহ। ইসলামের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর প্রতি বিপদাপদে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবে, কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে যথাসাধ্য তার খাবারের ব্যবস্থা করবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা ও সেবা-যত্নে এগিয়ে যাবে, নিজেদের বিশেষ উৎসব ও খানাপিনায় সাধ্যানুসারে অংশীদার করবে, শরিয়ত -বহির্ভূত কোনো কাজে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা না হলে প্রতিবেশীর দাওয়াত গ্রহণ করবে এবং পরস্পর দোষচর্চা, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতর, ঝগড়া-বিবাদ ও হানাহানি বর্জন করবে, ইত্যাদি হলো প্রতিবেশীর প্রতি অন্য প্রতিবেশীর অন্যতম অধিকার এবং সদয় আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে প্রতিবেশীর যথাযথ অধিকার আদায়ের তৌফিক দান করুন। বিভেদ, মতভেদ ও সব অনীহা ভুলে উদারতা ও সহনশীলতার সেতুবন্ধ সুদৃঢ় করার পথে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করুন।

লেখক: মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি।

পিএনএস/ সোহান

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন