ঈদ উদযাপনে দেশে দেশে নানা উৎসব

  12-04-2024 12:36PM



পিএনএস ডেস্ক: ঈদুল ফিতর মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় গাম্ভীর্য, মানবিক মূল্যবোধ ও নির্মল আনন্দের বার্তা দেয় ঈদুল ফিতর। সারা পৃথিবীর মুসলমান ধর্মীয় নির্দেশনা ও স্থানীয় সংস্কৃতির সম্মিলনে ঈদ উদযাপন করে থাকে। এখানে বিভিন্ন দেশের ঈদ সংস্কৃতি তুলে ধরা হলো :

১. জনসেবা আমিরাতের ঈদ সংস্কৃতির অংশ : রমজান শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই মুসলিমরা ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

তারা রঙিন বাতি ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ঘর সাজায়। নতুন কাপড় কেনে এবং ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন তৈরি করে। আরব আমিরাতের মুসলিমরা সকালে ঈদগাহে সমবেত হয়ে নামাজ আদায় করে। নামাজের পর উপহার ও খাবার বিনিময় করে।

শিশুরা সারা দিন বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগদান করে। আরব আমিরাতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী মুসলিম বসবাস করে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরাও সমবেত হয়। জনসেবা ও দান আরব আমিরাতের ঈদ সংস্কৃতির অন্যতম অংশ।

মুসলিমরা ঈদের দিন দান করতে ও উপহার দিতে পছন্দ করে। আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকেও খাবার, কাপড় ও অর্থ বিতরণ করা হয়। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আমিরাতে বন্দি মুক্তি দেওয়ারও প্রচলন আছে।

২. উৎসব করে চাঁদ দেখেন সৌদি আরবের মুসলিম : সৌদি আরবের নাগরিকরা উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মিলিত আয়োজনে ঈদের চাঁদ দেখতে পছন্দ করে। ঈদের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরবে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে চাঁদ দেখার ঘোষণা করা হয় এবং রাজপরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পারস্পরিক সাক্ষাতে তারা ‘ঈদ মোবারক’ বলে অভিনন্দন জানায়। ঈদের দিনটি তারা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। ঈদের দিন তারা শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে উপহার বিতরণ করে এবং আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে যায়। মসজিদ, ঈদগাহ, পার্কসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে শিশুদের খেজুর ও মিষ্টান্নের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। একইভাবে এসব স্থানে বড়রা শিশুদের জন্য চকোলেট ও চমৎকার সব উপহার নিয়ে আসে। ঈদ আয়োজনের অংশ হিসেবে ঈগল ও উটের প্রতিযোগিতা এবং ঐতিহ্যবাহী নাচের আয়োজন করা হয়।

৩. তুর্কিদের কাছে ঈদ চিনির উৎসব : তুরস্কে ঈদকে বলা হয় ‘সেকের বাইরামি’ বা চিনির উৎসব। এই নাম থেকেই বোঝা যায় তুরস্কের ঈদ আয়োজনে মিষ্টি কতটা প্রাসঙ্গিক। তুর্কিরা ঈদের দিন শুরু করে গোসলের পর নতুন কাপড় পরে। এরপর তারা বড়দের কাছে যায় দোয়া চাইতে। শিশুরা বয়স্কদের কাছ থেকে মিষ্টান্ন ও অর্থ উপহার পেয়ে থাকে। তুরস্কে ঈদ উৎসবে ঐতিহাসিক খাবার প্রস্তুত করা হয়; যেমন—বাকলাভা ও হালভা।

৪. বৈচিত্র্যে বর্ণিল নিউজিল্যান্ডের ঈদ : নিউজিল্যান্ডের বেশির ভাগ মুসলিম অভিবাসী। তাই ঈদ আয়োজনে দেশটিতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য দেখা যায়। মূলত প্রতিটি দেশের মুসলিমরা নিজস্ব পরিমণ্ডলে ঈদ উদযাপন করে। তার পরও নিউজিল্যান্ডের বড় শহরগুলোতে ঈদ উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে মেহেদি, ঐতিহ্যবাহী খাবার, অলংকার ও ধর্মীয় বইয়ের স্টল থাকে। থাকে সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন আয়োজন। এ ছাড়া মুসলিমরা ঈদ উপলক্ষে নানা সামাজিক ও সেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে।

৫. মুদিক ইন্দোনেশিয়ার ঈদ যাত্রা : ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল ফিতরকে বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতরি’। তাকবির (আল্লাহু আকবার) ধ্বনির মাধ্যমে ঈদ উৎসব শুরু করে দেশটির মুসলিমরা। সাধারণত তারা খোলামেলা স্থানে ঈদের নামাজ পড়তে পছন্দ করে। ঈদের নামাজের পর তারা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে এবং পরস্পরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ছুটির দিনে ঘরে ফেরাকে ইন্দোনেশিয়ানদের ভাষায় মুদিক বলা হয়। মুদিক বা গৃহযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার বিনা মূল্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে।

৬. মিলেমিশে ঈদ করে আইসল্যান্ডের মুসলিমরা : আইসল্যান্ডে মুসলমান দিন দিন বাড়লেও তাদের সংখ্যা এখনো খুব কম। তাই দেশটির মুসলিমরা সম্মিলিত ব্যবস্থায় ঈদ আয়োজন করে থাকে। শহরের মসজিদগুলোতেই সাধারণত ঈদের নামাজ পড়া হয় এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা একত্রিত হয়ে নিজ নিজ দেশের খাবার ও উপহার বিনিময় করে। শিশুরা সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে।

৭. ঐতিহ্যবাহী পোশাকে মিসরীয়দের ঈদ : মিসরীয় মুসলিমরাও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের চাঁদ দেখতে পছন্দ করে। ঈদের দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। ঈদের দিন মিসরীয় মুসলিমরা ঐতিহ্যবাহী ইসলামী পোশাক পরে। এ সময় তারা ফাত্তা ও কুনাফার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে এবং শিশুদের বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন উপহার দেয়।

তথ্যসূত্র : ডারসি ফ্লাওয়ারস ডট এই


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন