গুলশানের বাড়ি আপাতত সালাম মুর্শেদীর দখলেই থাকছে

  24-03-2024 07:12PM

পিএনএস ডেস্ক: পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত রাজধানীর গুলশানের বাড়িটিতে সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখল ও অবস্থানের ওপর আট সপ্তাহের স্থিতাবস্থা (স্টেটাসকো) জারি করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সালাম মুর্শেদীর করা আবেদনে শুনানির পর রবিবার (২৪ মার্চ) চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক।

পরে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘গুলশানের ওই সম্পত্তির দখল ও অবস্থানের ওপর আট সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন চেম্বার আদালত। দুই পক্ষকেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ওই সম্পত্তি যার দখল আছে তার দখলেই থাকবে। যিনি অবস্থান করছেন তিনিই অবস্থান করবেন। সে হিসেবে ওই বাড়িটি আপাতত সালাম মুর্শেদীর দখলেই থাকছে।’

আট সপ্তাহ পর কী হবে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পেলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ফাইল করব। না পেলে স্থিতাবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হবে।’

আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

রিটে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাড়িটি দখল করে বসবাস করছেন। এ দাবির পক্ষে আইনজীবী সুমন তার রিট আবেদনে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করেন। এসব চিঠির ভাষা প্রায় একই ছিল। পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কিভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, ২০১৫ ও ১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চায় পূর্ত মন্ত্রণালয়।

কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় ২০২২ সালের ৪ জুলাই ফের চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কিভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বাড়িটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হলেও রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।

রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুলসহ আদেশ দেন। অন্তর্বর্তী আদেশে বাড়িসংক্রান্ত যাবতীয় নথি আদালতে দাখিল করতে গণপূর্তসচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত বাড়ি দখলের কারণে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না জানতে রুল জারি করা হয়।

এ রুলটিই নিষ্পত্তি করে গত ১৯ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। গুলশানের বাড়িটি সরকারকে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে তা হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন সালাম মুর্শেদী। সে আবেদনে শুনানির পর স্থিতাবস্থা জারি করলেন চেম্বার আদালত।

সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন