সড়ক ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা চাঁদাবাজি যুবলীগ নেতার

  27-03-2024 03:21PM



পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মদপুর রিং রোড প্রধান সড়ক ও ফুটপাতের একাংশ দখল সড়ক ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহরুখ জাহান পাপ্পু। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আদাবর থানার ১০০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি।

জানা যায়, মোহাম্মদপুর রিং রোডের কৃষি মার্কেটের পাশে প্রিন্স বাজারের সামনের সড়কটি তিনি দখল করেছেন। প্রিন্স বাজার থেকে শুরু করে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত পুরো সড়কটি দখল করে দোকানের সাইজ হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন যুবলীগের এ নেতা। যেখানে সড়কটি দখল করে সড়কের ওপর প্রায় তিনশর অধিক দোকান গড়ে উঠেছে। সড়ক দখল করে বসা এসব দোকান থেকে প্রতিদিন দোকান ভাড়া বাবদ ৯০ হাজার টাকা ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। পাশাপাশি পুলিশের নামে প্রতি মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে এই চক্রটি।

এ ছাড়া সড়কের ওপর দোকান বসাতে হলে অগ্রিম বাবদ এককালীন চাঁদা হিসেবে প্রতি দোকান মালিকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩০-৫০ হাজার টাকা। শুধু অগ্রিম বাবদ এই চাঁদাবাজির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

স্থানীয়দের অভিযোগ— রিং রোডের ব্যস্ততম এই সড়ককে চাঁদাবাজ চক্রটি চাঁদাবাজির জন্য বেছে নিয়েছে। কারণ এই সড়কে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরিজীবীসহ নানা পেশার কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কারণে বিকাল হলেই পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।

যানজটের কবলে পড়ে সাধারণ বাসিন্দাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে এসব দোকান বসানোর কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাকরিজীবী নারীদের প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। সড়ক দখল করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হওয়ার পরও পুলিশকে কখনো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের রিং রোড কৃষি মার্কেটের পাশে প্রিন্স বাজারের সামনের সড়কটি দখল করে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত দখল করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহরুখ জাহান পাপ্পু দোকানপাট বসিয়েছেন। এ সড়কটি দখল করে তিনশ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে। যে দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন ভাড়া তুলতে রাসেল নামে একজনকে লাইনম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

যুবলীগ নেতা পাপ্পুর নির্দেশে লাইনম্যান রাসেল প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা লাইন ভাড়া তুলেন, যা লাইন থেকে দৈনিক ভাড়া বাবদ ৯০ হাজার টাকা তোলা হয়। সে হিসাবে প্রতি মাসে দোকানগুলো থেকে ভাড়া বাবদ ২৭ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

এ ছাড়া সন্ধ্যার পর দোকানগুলোতে আলো জ্বালানোর জন্য লাইট ব্যবহার করা হয়, যা প্রতি দোকান থেকে ডিপিডিসির নামে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতিদিন ১০০ টাকা করে তোলা হয়, যা বিদ্যুৎ বিল বাবদ দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজার করে মাস শেষে ৯ লাখ টাকা চাঁদা তোলে চক্রটি।

প্রতি মাসে পুলিশের নামে লাইন চার্জ হিসেবে প্রতি দোকান থেকে মাসিক ১৫০০ টাকা ভাড়া তোলা হয়, যা প্রতি মাসে শুধু পুলিশের নামে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে। পাশাপাশি দোকান বসাতে হলে এককালীন অগ্রিম বাবদ দোকানপ্রতি দিতে হয় ৩০-৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে তিনশ দোকান থেকে এককালীন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন দোকানদার বলেন, আমরা এখানে দোকান বসিয়ে অনেক সময় বাড়ি থেকে টাকা এনে ভর্তুকি দিতে হয়। প্রতিদিন লাইন বাবদ এক খরচ, বিদ্যুৎ বাবদ আরেক খরচ, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ বাবদ খরচ। এভাবে প্রতিদিন প্রায় তিনশ থেকে শুরু করে ৬শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। যখন পুলিশ এসে দোকানপাট তুলে দেয়, এর সপর আবার খরচের খাতা বেড়ে যায়।

এরপর শুরু হয় আমাদের চুষে নেওয়ার নতুন কৌশল। তখন লাইনম্যান পুলিশকে বাড়িয়ে দিতে হবে বলে এককালীন ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকাও আদায় করে আমাদের থেকে। দোকান বসাতে গেলে অগ্রিম ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তো আছেই। এখানে কেউ দোকান বসাতে এলে তাকে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা চুষে খায় প্রতিদিন।

সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে যুবলীগ নেতা শাহরুখ জাহান পাপ্পুর মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল ও মেসেজ পাঠিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, সড়কে সব ধরনের যানজট এড়াতে আমরা প্রতিদিন বিকালে আমাদের ক্রাইম জোনের সহায়তায় কাজ করছি। বিশেষ করে, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে যারা দোকানপাট বসায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া আমাদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন যদি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তা হলে পুরো এলাকাজুড়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত থাকবে। যুগান্তর


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন