‘ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে’

  19-06-2022 02:55PM

‘ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে’

পিএনএস ডেস্ক : এই ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

রিজভী বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় যেমন এই সরকারের অবহেলা ও দুর্নীতি গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এই ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে।

প্রতিটি দুর্যোগের সময়ে, জনগণের কষ্টের সময়ে, সরকার ব্যস্ত হয়ে যায় উৎসব নিয়ে আনন্দে। করোনায় যখন মানুষের জীবন-মরণ লড়াই চলছিল তখন জন্মশত বার্ষিকীর উৎসবে মত্ত ছিল তারা। এখন মৌজ মাস্তি করছে পদ্মা সেতু নিয়ে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। নাচ-গান করতে হবে। আঁতশবাজি ফুটাতে হবে। বর্ণাঢ্য লেজার শো-এর আয়োজন করতে হবে। সারাদেশে একসঙ্গে বেলুন উড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বিগ স্ক্রিনে দেখাতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে সারাদেশের মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন আনন্দ উৎসব করতে।

দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লাখ লাখ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। তিন শ’ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে।

জনসভাস্থলে পাঁচ শ’ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনিহা দেখাবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশের সংবাদপত্র এবং সকল মিডিয়াকে সরকার লিখিতভাবে ফরমান জারি করেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, কেউ নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কয়েকদিন আগে ভারত থেকে একদল সাংবাদিক ভাড়া করে এনে পদ্মা সেতু দেখানো হয়েছে। তাদের এই সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার স্তুতি বন্দনা করে রিপোর্ট লেখার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানিবন্দি মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদকদের জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিলেটে দুই শ’ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, আট হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।’

রিজভী বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে স্ব স্ব জেলার নেতাদের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেট মহানগর, সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ জেলা, সুনামগঞ্জ জেলা, নেত্রকোণা জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছে।

তারা স্যালো নৌকা ও ট্রলার দিয়ে দুর্গত এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থলে আনতে সহযোগিতা শুরু করেছে। বন্যার্তদের মাঝে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজি বন্ধ করুন। আমরা দাবি করছি, বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।

আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং বন্যা যেন না হয় সেটার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, স্বেচ্ছাসেবক দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন