উপজেলায় আগ্রহী বিএনপি’র তৃণমূল

  23-02-2024 10:19AM


পিএনএস ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দলটির তৃণমূলের বেশকিছু নেতা। ইতিমধ্যে অনেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। অনেকে জোরেশোরে চালাচ্ছেন প্রচারণা। নির্বাচনে অংশ

নেয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। তারা বলছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। ফলে প্রতিটি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকবে। সেক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বিএনপি’র প্রার্থীরা। তারা আরও বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিভাবক হলেন দলের এমপিরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে বিএনপি’র এমপি প্রার্থীরা কর্মীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন।

তাই দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে কর্মীরা তাদের কাছে আশ্রয় পাবেন। এ ছাড়া একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া তৃণমূল কর্মীরা চাঙ্গা হতে পারেন।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে এখনো নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা। যদিও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে বহিষ্কারের আগের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে লাভ-ক্ষতি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। দলীয়ভাবে প্রার্থী না দিলেও কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হতে পারে।

২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সেবার শতাধিক উপজেলায় বিএনপি’র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর প্রথমদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয় বিএনপি। তবে ২০২১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে বিএনপি থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।’ তখন থেকেই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জন করছে দলটি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সিটি নির্বাচনে অংশ নেন কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু ও নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকার। এ ছাড়া উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনেও কিছু নেতা নির্বাচন করেন। তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এবারো কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার। এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তিনবারের চেয়াম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহাজাহন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জোরেশোরে প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি।

বন্দর থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল বলেন, উপজেলা নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। আশা করি সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে পাস করবো। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে বিএনপি’র অংশ নেয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে না গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না। এ ছাড়া সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা যায় না। তাই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে কর্মীরা উজ্জীবিত হয়। আমি মনে করি, উপজেলা, পৌরসভা, ইউপি সব স্থানীয় নির্বাচনেই বিএনপির অংশ নেয়া উচিত।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামরুল হুদা বলেন, এটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র থেকে যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার স্বাধীনতা দেয় তাহলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল বলেন, তৃণমূলের অনেক নেতাই নির্বাচন করার জন্য আগ্রহী। আমার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। তিনি আরও বলেন, সদ্য কারামুক্ত মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছি। উনার সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেবো।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নবী নেওয়াজ খান বিপুল বলেন, আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল থেকে যদি নির্দেশনা দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাউকে বাধা না দেয়া কিংবা নিরুৎসাহিত না করা কোনো আলোচনাই হয়নি। বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য আরও বলেন, এই সরকারের আমলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনও নিরাপদ নয়। তাদের ভোটের চরিত্র এক। তাই স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন