বিএনপির নেতৃত্বে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন

  21-05-2024 09:43AM




পিএনএস ডেস্ক: কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে শিগগিরই। ইতোমধ্যে দলটির হাইকমান্ড সংগঠন ঢেলে সাজানোর এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জানা গেছে, সহসা জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা না থাকায় বর্তমানে বিভিন্ন পদে দায়িত্বশীল নেতাদের ‘কন্ট্রিবিউশন ও ডেডিকেশন’ বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল। এরপর ওই বছরের ৬ আগস্ট দলটির নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলিয়ে মোট ৫৯২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর সম্মেলন (কাউন্সিল) করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা। সে হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়ে চলছে বিএনপির কার্যক্রম। সর্বশেষ কাউন্সিলের পর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারবিরোধী দ্ুিট আন্দোলনও করেছে দলটি। তবে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে না পারার জন্য সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা এবং সরকারের দমন-পীড়নকে দায়ী করছে বিএনপি। সর্বশেষ গত মার্চের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হলেও পরবর্তীতে সে আলোচনা আর এগোয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির আন্দোলন ও বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এমন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী দিনে বিএনপির কর্মপন্থা কী হবে তা নিয়ে আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর সাথে শলাপরামর্শ শুরু করেছেন নেতারা। একই সাথে দল পুনর্গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলন-পরবর্তী বিভিন্ন সাংগঠনিক প্রতিবেদনে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।


জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন অর্ধশতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। নেতাদের মৃত্যু, দলত্যাগ, অব্যাহতি, পদোন্নতি ও পদাবনতিজনিত কারণে এসব পদ শূন্য হয়েছে। এছাড়া বয়সের কারণে অনেকে দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পদ রয়েছে ১৯টি। ২০১৬ সালের কাউন্সিলের পর এর মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ শুরু থেকেই দুটি পদ শূন্য ছিল। পরবর্তীতে এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা গেলে মোট ছয়টি পদ শূন্য হয়। সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করায় শূন্যপদ ৭-এ দাঁড়ায়। পরে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দেয়ায় এখন পাঁচটি পদ খালি রয়েছে স্থায়ী কমিটিতে। তবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে তারা স্বপদেই বহাল থাকছেন বলে জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের ক্ষেত্রে যাদের নাম দলের অভ্যন্তরে আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে, তারা হলেন দলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুলাহ আল নোমান, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে বহিষ্কার, পদত্যাগ, অব্যাহতি ও মৃত্যুজনিত কারণে বর্তমানে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। রুহুল কবির রিজভীকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হলে সে ক্ষেত্রে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদও পূরণ করতে হবে দলটিকে। জানা গেছে, সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে যুগ্ম মহাসচিবের সংখ্যা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিভাগভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে একজন করে যুগ্ম মহাসচিব দায়িত্ব পালন করবেন।

বিএনপিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পদে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচিত করার বিষয়ে কাজ করেন। তৃণমূলে সংগঠনকে গতিশীল করা এবং আন্দোলন-সংগ্রামে তৃণমূলের সাথে কেন্দ্রের সমন্বয় সাধনেও কাজ করেন। এর আগে এ পদে সাবেক ছাত্রনেতাদের দায়িত্ব দিতে দলের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা প্রস্তাব করেছিলেন। তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই এবার এই পদে তার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদগুলোতে কোন কোন নেতাকে নিয়োগ দেয়া হতে পারে, তা নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড নানামুখী যাচাই-বাছাই শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এসব পদের জন্য যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন- আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, তাহসিনা রুশদির লুনা, আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, জহির উদ্দিন স্বপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরীন, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শরিফুল আলম, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রকিবুল ইসলাম বকুল, শিরিন সুলতানা, রেহানা আক্তার রানু, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জি কে গউছ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কলিম উদ্দিন মিলন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমীরুল ইসলাম খান আলীম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, তাইফুল ইসলাম টিপু, মীর হেলাল, জয়ন্তু কুমার কুন্ডু, মোস্তফা খান সফরী, হাসান মামুন, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, হায়দার আলী লেলিন, আমীরুজ্জামান খান শিমুল, দুলাল হোসেন, ওমর ফারুক সাফিন, শেখ মো: শামীম ও আব্দুল মতিন।

জানা গেছে, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদগুলোতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেয়া হতে পারে। এ দিকে গত ফেব্রুয়ারিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার মহাসচিব পদে থাকা না থাকা নিয়ে বিএনপিতে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে সব গুঞ্জন-আলোচনা উড়িয়ে দিয়ে শারীরিক চিকিৎসা শেষে দলীয় কার্যক্রমে পুরো মাত্রায় সক্রিয় হন তিনি। মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম এখন পর্যন্ত হাইকমান্ডের আস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দল পুনর্গঠন প্রসঙ্গে বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কিছু শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোও যথাসময়ে পূরণ করা হবে। কাউন্সিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখন আন্দোলনের মধ্যে আছি। তারপরও কাউন্সিল করার চেষ্টা ও ইচ্ছা আমাদের আছে। সেটাও আমরা সময় মতো করব।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন