বিশ্বের প্রথম এক্স-রে ফটোতে কেন আংটি ছিল?

  15-11-2023 09:17AM



পিএনএস ডেস্ক: প্রফেসর রন্টজেন সেদিন জানতেন না তিনি কী আবিষ্কার করেছেন। জানতেন না বলেই প্রথম এক্সপেরিমেন্ট করলেন স্ত্রীকে নিয়ে। একদিন তিনি তার স্ত্রীকে ডাকলেন। স্ত্রীকে বললেন, পর্দার সামনে হাত মেলে ধরতে। তখন তার স্ত্রীর হাতে বিয়ের আংটি পরা ছিল। টিউবের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে তিনি দেখতে পেলেন পর্দায় তার স্ত্রীর হাতের হাড়ের ছবি ভেসে উঠেছে এবং বিয়ের আংটির স্থানে কালো রঙের ছায়া দেখা যাচ্ছে। উইলহেম বুঝতে পারলেন, তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ রশ্মি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। অজ্ঞাত রশ্মিটির নাম তিনি দিলেন ‘এক্স-রে’।

আরেকটু বিস্তারিত বলা যাক, সালটি ১৮৯৫। গবেষণাগারের কাজ সেরে ঘরে ফেরার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন উইলিয়াম রন্টজেন। টেবিলের ওপর রাখা ক্যাথোড টিউবকে একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। ক্যাথোড টিউবের চারপাশে ছিল বেরিয়াম প্লটিনোসায়াইডের প্রলেপ দেওয়া কাগজ । তাড়াহুড়োয় ক্যাথোডের সুইচ বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।

বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ঘরের আলো নিভিয়ে। কিন্তু আলো নেভাতেই আরেকটা আলোর ঝলক। বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইডের প্রলেপ দেওয়া কাগজের ওপর পড়ল সেই আলো। চমকে উঠে ফিরে এলেন তিনি। বারবার ক্যাথোড টিউবের সুইচ বন্ধ ও চালু করে দেখলেন। দেখা গেল একই ঘটনা ঘটছে বারবার। কিন্তু কীসের আলো বোঝা গেল না।

আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করলেন পর দিন। ক্যাথোড নলের ভেতর থেকেই আসছে সেই আলো। তবে কীসের আলো বোঝা যাচ্ছে না। শুধু বোঝা যাচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ বাড়লে বাড়ছে আলোর ভেদনক্ষমতা। দেওয়ালও ভেদ করে যাচ্ছে ওই রশ্মি। এই দিয়েই ফটো তোলার ইচ্ছে জাগল তার মনে।

পর দিন ল্যাবে স্ত্রীকে নিয়ে এলেন রন্টজেন। একটি ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর তাঁকে হাত রাখতে বললেন। সেই হাতের উপর ফেললেন রহস্যময় আলোটা। কিছুক্ষণ পর ডেভেলপ করে আনতেই চমকে উঠলেন স্ত্রী। কারণ তখন প্লেটে দেখা যাচ্ছে শুধু হাড়গোড়।

রন্টজেনের এই আবিষ্কারটিই আসলে এক্স রে। যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়। পদার্থবিদ্যায় নয়, চিকিৎসাবিদ্যাতেই এর বহুল ব্যবহার। তবে পৃথিবীর প্রথম এক্স রে ফটোগ্রাফ ছিল রন্টজেনের স্ত্রীয়ের হাতের ছবি।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এক্স-রের ব্যবহার অনেক বাড়ছে। এখন এয়ারপোর্টের চেকিং থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্স-রে অবজারভেটরি পর্যন্ত এক্স-রের বহুবিধ ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রের ব্যবহার যে কত প্রয়োজনীয়, তা আমরা সবাই জানি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রের সাহায্যে যে রেডিওগ্রাফ তৈরি করা হয়, সেটাকেই আমরা এক্স-রে বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন