মুজিবকোর্ট খুইলা ওসিরে গুঁতাইছি: নৌকা প্রার্থী

  26-11-2021 09:55PM

পিএনএস ডেস্ক: আমি মুজিবকোট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪-৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল কর)। সব কনস্টেবল আমার পক্ষে ছিল। তারা বলছে, স্যার আগেই বলছিলাম মিলন মিয়া কি জিনিস, যে থানায় আইয়া গুঁতাইবে (মারধর)। এহন গুঁতা খাইছেন? আমি এই মুজিবকোট খুইলা ওসিরে ওই রুমের মধ্যে গুঁতাইছি।

বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণায় এভাবেই বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রাজগুরু গ্রামে উঠান বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।

তার বক্তব্য ‘বাবুগঞ্জ দর্পণ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে লাইভ করা হয়। এ বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওসিকে মারধরের কথা প্রচার করছেন। একই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন লোককে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলছেন। এগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর উঠান বৈঠকের ৪১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর ১০ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সময় বলতে শোনা যায়, আমি (আক্তারুজ্জামান মিলন) আপনাদের একটি সম্পদ। এর আগের নির্বাচনে আমার ভোট রাশেদ খান মেনন চুরি করে নিয়ে গেছে। বাবুগঞ্জের ওসি মাহাবুব সে গৌরনদীর জামাই ছিল। এই সুফিয়ান ভাই (পাশের এক সমর্থক) সেদিন বলতেছিল আমার ভোট ঘুরানোর জন্য ওসি নির্দেশ দিয়েছে। সে গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কেটেছে। সেন্টারে সেন্টারে গুলি করেছে। এই কথা জানতে পেরে আমি মুজিবকোট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪-৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল কর)।

মিলনের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রহমতপুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা তার বক্তব্য শুনেছি। তিনি ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন যেন ভোটাররা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে না যায়। তিনি শুধু ওসিকে মারধরের বক্তব্য দিয়েছেন এমন নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ারম্যান ও বহিরাগতদের এনে জড়ো করেছেন। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতেই তার এসব চেষ্টা।

ওসিকে মারধরের ভিডিও বক্তব্য অভিযোগ আকারে আমরা সরকারি বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার অন্যান্য ইউনিয়নে যেভাবে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে তেমনি রহমতপুর ইউনিয়নে সুষ্ঠু ভোট উপহার দিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।

অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, বক্তব্যে আমি পুলিশে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম হতে পারে সেভাবে বোঝাতে পারিনি। আমি বলতে চেয়েছি আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাবস্থায় যারা আমার কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়েছে তাদের কারও কাছ থেকে আমি একটা টাকাও নেইনি।

ওসিকে মারধরের বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, গত নির্বাচনের (২০১৬ সাল) সময় বাবুগঞ্জের তৎকালীন ওসি মাহাবুব আমার তিনটি কেন্দ্রে গুলি করেছে। সেই তিনটি কেন্দ্রে আমি বিজয়ী হতাম। ওসি টাকা খেয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়ে গেছে। সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন ফোন করে আমাকে গালি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ডিসি রায়হান সাহেব আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল।

তিনি বলেন, বক্তব্যে মানুষ অনেক কথাই বলে। বক্তব্য আর বাস্তবতা এক না। থানার ওসিকে মারধরের ঘটনা সত্য নয়। তবে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়েছিল। তবে বুধবারের সভায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট পাওয়ার জন্য এটুকু বলতে হয়েছে।

এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, আগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন থানায় ঢুকে ওসিকে মারধর করেছেন- এমন বক্তব্য আমি এখনো শুনিনি। বিষয়টি জেনে আমি জানাব।

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওসিকে মারধর করার বক্তব্য অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। তাছাড়া কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা প্রচার করা, পেশিশক্তি ব্যবহারের হুমকি দেওয়াও আইনের লঙ্ঘন। প্রচার-প্রচারণায় এমন আচরণ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই কর্মকর্তা বলেন, কেউ এখনো এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রহমতপুর ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউনিয়নে পাঁচজন চেয়ারম্যান ও ৩৩ জন সংরক্ষিত এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০টি ভোট কেন্দ্রে ২১ হাজার ৫৫৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

পিএনএস/আইএইচ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন