মিশরী তরুণী এখন বীরগঞ্জের পুত্রবধূ

  09-08-2022 12:45PM



পিএনএস ডেস্ক : উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, নাকে নাকফুল, মাথায় হিজাব, গলায় চেইন, গায়ের রঙ কমলা, পায়ে চটি সেলোয়ার কামিজ পড়া, স্বামীর সঙ্গে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য সাজগোজ করছেন।

এমন সময় কয়েকজন সংবাদকর্মী হাজির দিনাজপুরে বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউপির অর্জুনের হার গ্রামের শমসের আলীর বাড়িতে। তাদের দেখেই এক ঝলক মুখের হাসি।

ভাষা-সংস্কৃতির ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশিকে বিয়ে করে সুদূর মিশর থেকে বাংলাদেশে এসেছেন মিশরীয় তরুণী নুরহান। সংসার শুরু করেছেন স্বামী শমসেরের সঙ্গে। এদিকে বিদেশি বধূকে দেখতে আশপাশের এলাকার মানুষের পদচারণায় মুখরিত শমসেরের বাড়ি।

২০০৭ সালে বাবার অভাবের সংসারে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নিকট এক আত্মীয়র সহযোগিতায় মিশরে গিয়েছেন শমসের আলী। এরইমধ্যে সংসারের অনেক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

নিজের এক ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনকেও তিনি মিশরে নিয়ে গিয়েছেন। চাচাতো ভাইকেও মিশরে নিয়ে গেছেন। এছাড়াও নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ৭-৮ জনকে মিশরে নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শমসের আলী।

২০১৮ সালে মিশরে থাকা অবস্থায় ভালবেসে সেই দেশের আইন কানুন মেনে নুরহানকে বিয়ে করেন তিনি। এই প্রথম স্ত্রী নুরহান তাদের এক মেয়ে রুকাইয়া (৩) এবং একমাত্র শিশুপুত্র ইয়াসিনকে (১১ মাস) সঙ্গে নিয়ে ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে দুই মাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।

এই বিদেশিনী মিশরীয় নাগরিক পুত্রবধূ নুরহান সঙ্গে নাতি ও নাতনীকে কাছে পেয়ে শ্বশুর বাদশা মিয়া, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম আনন্দিত।

শমসের আলী বলেন , ২০১৮ সালে মিশরীয় নাগরিক নুরহানের সঙ্গে সেই দেশেরই একটি গার্মেন্টসে প্রথম পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই নুরহান আমাকে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন। এরপর দুজনের মধ্যেই প্রেমের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। একপর্যায়ে নুরহান তার বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যান। তার বাবার সঙ্গে বলার পর তিনি বিয়েতে রাজি হন।

আমিও আমার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের অনুমতি নিয়ে বাঙ্গালী কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে মিশর দেশের আইন মেনে বিয়ের কাজ সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের দুই বছর পর আমাদের ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের তিন বছর পর ইয়াসন (১১ মাস) বয়সী এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমাদের দাম্পত্য জীবনে এখন এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ভালোই আছি।

শমসের আলীর স্ত্রী নুরহান, বাংলা বলতে না পারলেও আরবিতেই সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। আরবির বাংলা অনুবাদ হিসেবে তার স্বামীর শমসের আলী সংবাদকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার তার অনেক ভালো লেগেছে। এটা তার স্বামীর দেশ। এ দেশকে তিনি অনেক ভালবেসেন। মিশর দেশের সঙ্গে এদেশের কৃষ্টি-কালচার অনেক পার্থক্য থাকলেও স্বামীর দেশ হিসেবে এই দেশটিকে ইতিমধ্যেই তিনি গভীরভাবে অনুভব করছেন। শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো শ্রদ্ধা করেছেন।

শমশের আলীর বাবা বাদশা মিয়া বলেন, ছেলেকে ১৫ বছর পর কাছে পেয়েছি। সঙ্গে পেয়েছি মিশরীয় নাগরিক পুত্রবধূকেও। আমার নাতি-নাতনী কাছে পেয়ে আরো বেশি আনন্দিত হয়েছি।

পুত্রবধূ নুরহান বাংলা ভাষা বলতে না পারলেও ইশারায় ইঙ্গিতে বাজারে যাওয়ার সময় তার প্রয়োজনী কিছু খাবার আনতে বলে। তার পছন্দের কিছু খাবার আমি বাজার থেকে কিনে এনে তার হাতে দিলে সে অনেক খুশি হয়। এক কথায় বিদেশিনী পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনীকে কাছে পেয়ে প্রতিটি দিন যেন ঈদের দিন মনে হচ্ছে।

শমসের আলীর মাতা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার পাঁচ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শমসের আলী দ্বিতীয়। ১৫ বছর আগে বিদেশে গেলেও মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কথা হতো। কিন্তু তাতে মন ভরত না। গত ঈদুল আজহার দিনে আমার ছেলে শমসের আলী ও পুত্রবধূ নুরহান, নাতি ও নাতনিকে নিয়ে বাসায় পৌঁছলে আমি স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছি।

দেবর মকবুল হোসেন বলেন, বিদেশি ভাবি বাসায় আসার পর থেকেই আমরা যেন এক আনন্দের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছি। ভাবিকে দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আমাদের বাসায় ভিড় করছে। ভাবিও এতে আনন্দিত হচ্ছে।

প্রতিবেশী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ভাতিজা শমসের আলী মিশরে থাকা অবস্থায় মোবাইলে কথা হত। আজকে আমাদের মিসরীয় নাগরিক পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম এসেছে। আমাদের গ্রাম যেন এক আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সূত্র : ডেইলি-বাংলাদেশ

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন