জীবন বাঁচাতে মৃৎশিল্পেও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া!

  29-05-2023 03:43PM


পিএনএস ডেস্ক: মৃৎশিল্পে সকলেই জড়িত চিরিরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের পালপাড়া। পালপাড়ার ভিতরে যে কেউ গেলেই বুঝতে পারবে এলাকাটি মৃৎশিল্পের। তবে ঐতিহ্যের সেই পালপাড়া আজ বদলে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। এখনও প্রতিটি পরিবার এই মৃৎশিল্পে জড়িত থাকলেও অনেক পরিবারের কেউ কেউ পেশা বদলে ভ্যান চালক, দোকানদার নয়তো অন্য পেশায় চলে গেছে। বাজারে মৃৎশিল্পের চাহিদা থাকলেও আর্থিক সংকটের কারণে প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিতে পারছেন না বেশিরভাগই।

তবে কয়েকজন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। তারা মৃৎশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যে। ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যেই ঘুরছে মাটির জিনিসপত্র তৈরির চাক। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহারে মৃৎশিল্পের কারিগরদের শারীরিক শ্রম সাশ্রয়ের সাথে স্বল্প সময় এবং স্বল্প খরচে অধিক পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র উৎপাদন করতে পারছেন। এতে বদলে যাচ্ছে অনেক মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও।

পাল সম্প্রদায়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের দিঘলনালীপাড়ার এস এম মজিবর রহমান ২০১৯ সালে উদ্ভাবন করেছেন মৃৎশিল্পে ব্যবহারে কুমারদের জন্য বৈদ্যুতিক চাক মেশিন। খানসামা সড়কের দরগাহ্পাড়ে মেসার্স রাজা ইলেকট্রিক এন্ড ওয়ার্কশপ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়েছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত বৈদ্যুতিক চাক মেশিন বৈদ্যুতিক মর্টারে এসি থেকে ডিসিতে রূপান্তরিত হয়ে স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে ডিসি মটর ব্যবহারে বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি ঘুরছে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ২.৫ অশ্ব শক্তিতে ১৪৭০ আরপিএম (গতি) রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন তৈরিতে খরচ পড়ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃৎশিল্পের কারিগরদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে এবং ৩ গুণ উৎপাদন বেশি হবে। ফলে মৃৎশিল্পীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে।এছাড়াও মৃৎশিল্পের উন্নয়নে মাটির মন্ড তৈরির মেশিন তৈরির চেষ্ঠা করছেন তিনি।

মৃৎশিল্পী বাবলু চন্দ্র পাল জানান, বাব-দাদার আমল থেকে পরিবারের সবাই এই পেশায় জড়িত। মাটিসহ পোড়ানোর কাজে খরচ এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় আগের মত আয় হয় না। বলা যায় দুর্দিন চলছে। তাই অনেকে পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। মাসে ২৬-৩০ হাজার টাকার মাটির হাড়ি-পাতিল, কলস, টপসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরী করে বিক্রি করতে পরিবারের ৫ জনকে শ্রম দিতে হয় এবং এখন খরচও বেশি হয়। তাই কোন রকমে সংসার চলে।

মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল, শ্যামল চন্দ্র পাল, প্রতিবন্ধী রুপ কুমার পাল জানান, আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ফুলের টব বা হাড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারতাম। এখন এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মাটির ফুলের টব বা হাড়ি-পাতিল তৈরি করা যায়। বিদ্যুৎ খরচও কম। এ মেশিনে মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। মেশিন ব্যবহারে সময় এবং শ্রমও সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ব্যাপারে বৈদ্যুতিক চাক মেশিন উদ্ভাবক এস এম মজিবর রহমান জানান, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারছি না। তবে মেশিনটি কীভাবে আরো উন্নত করা যায় তার চিন্তা-ভাবনা করছি। এ পর্যন্ত ২৫টি এই মেশিন বিক্রি হয়েছে। এই মেশিনে বিদ্যুৎ খরচ কম।সোলার বিদ্যুৎ দিয়েও চলবে মেশিনটি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে এ মেশিন বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করে মৃৎশিল্পকে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন