২৭ বছর পর বাড়ি ফিরে যা দেখলেন শাহীদা!

  16-04-2024 01:18AM



পিএনএস ডেস্ক: ২৭ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন শাহীদা আক্তার। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। এরপর অনেক খুঁজেও তার মা-বাবা মেয়েকে ফিরে পাননি। শাহীদাও ঠিকানা বলতে না পারায় আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। সেই শাহীদাই দীর্ঘ ২৭ বছর পর বাবার বাড়ি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, তার মা-বাবাই আর বেঁচে নেই। চার বছর আগে দুজনে মারা গেছেন। বাড়িতে ফিরে ভাই-বোনদের সঙ্গে শাহীদার দেখা হয়েছে। তাদের পুনর্মিলনের মুহূর্তটিতে তৈরি হয় এক আবেগঘন দৃশ্য।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে শাহীদা। রোববার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনি ফিরে এসেছেন তার বাড়িতে। এ সময় তার বড় বোন খালেদা বেগম যখন চিনতে পারেন শাহীদাকে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তারা ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন।

শাহীদারা তিন বোন ও এক ভাই। তাদের মধ্যে শাহীদা তৃতীয়। বর্তমানে শাহীদা জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ভৌলাকীপাড়া গ্রামে তার বড় বোন খালেদার বাড়িতে অবস্থান করছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির অভাবের সংসার ছিল। গ্রামে তেমন কোনো কাজকর্ম ছিল না। বাধ্য হয়ে ১৯৯৭ সালে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় উত্তরায় চলে যান। সেখানে তার বাবা রিকশা চালাতেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ছোট্ট শাহীদা লাকড়ি কুড়াতে যান। সেখান থেকে শাহীদা হারিয়ে যান। তার মা–বাবা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তার আর সন্ধান পাননি তারা। এরপর থেকে শাহীদা নিখোঁজ ছিলেন। এরপর কীভাবে যেন শাহীদা চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তারাই তাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন। তারপর থেকে শাহীদা স্বামীকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন। শাহীদার ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

শাহীদা আক্তার বলেন, ‘আমি জীবনেও কল্পনা করিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারব। আমার ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারব। প্রায় সময় মা–বাবা ও পরিবারের কথা মনে পড়ত। কিন্তু ছোটবেলার আর কিছুই স্মরণ করতে পারতাম না। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইল। মেয়ের নানা রকম প্রশ্নে হঠাৎ বকশীগঞ্জের দিকপাড়া নামটি মনে পড়ে যায়। তখন থেকে বকশীগঞ্জের দিকপাড়া খুঁজতে থাকি। মা-বাবাকে দেখার জন্যই খুঁজতে খুঁজতে এই গ্রামে চলে আসি। নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার মনের আশা পূরণ হলো না; কারণ, আমার মা–বাবাই আর পৃথিবীতে নেই। বোন, ভাইসহ পরিবারের অন্য সবাইকে পেলাম ঠিকই। কিন্তু মা–বাবাকে পেলাম না। তারপরও নিজের পরিবার পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।’

শাহীদা নিজের ভাইবোনকে খুঁজে পেয়েছেন, এতে খুশি তার স্বামী সেলিম মিয়া। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

২৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বড় বোন খালেদা বেগম। তিনি বলেন, মা-বাবার সঙ্গে তারা সবাই ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তার ছোট বোন শাহীদা হারিয়ে যায়। তারপর তার আর কোনো সন্ধান পাননি তারা। তার কোনো দিন সন্ধান পাবেন, তিনি চিন্তাও করেননি। দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর পর বোনকে ফিরে পেয়ে তাঁরা সবাই এখন আনন্দিত। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহীদাকে এক পলক দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামবাসী।

খালেদা বেগম আরও বলেন, ‘বোনের ছোট বয়সের অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। বোনকে হারানোর পর মন খারাপ করতাম। মনে হতো, বোনকে বুঝি কখনো ফিরে পাব না। তবে বাবা বলতেন, ‘শাহীদা বেঁচে আছে, কোনো একদিন ফিরে আসবে। একদিন না একদিন ঠিকই মেয়েকে পাব।’ অবশেষে বাবার কথাই সত্য হলো। কিন্তু বাবা আর বেঁচে নেই। মা-বাবা বেঁচে থাকলে কতই না খুশি হতেন।’


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন