‘রান্না করতে গ্যালে দমটা বন্ধ হইয়া যায়’

  29-04-2024 12:27PM




পিএনএস ডেস্ক: ঘরের আকার প্রায় একশো বর্গফুট। উপরে টিনের ছাউনি। চারদিকে ইটের দেয়াল৷ব্যয়বহুল এই শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুর জন্য মাসে ভাড়া গুনতে হয় চার হাজার টাকা।

জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমানো মো. মামুন মিয়ার জায়গা হয়েছে মোহাম্মদপুরের এমনই একটি বাসায়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এক কক্ষের বাসাটিতে ভাড়ায় থাকেন তিনি।

ঘরের প্রতি বর্গফুটের জন্য ৪০ টাকা হারে ভাড়া দিলেও এই গরমে স্বস্তিতে নেই তিনি। মামুন বলেন, দিনের বেলা ঘরের মধ্যে টেকা যায় না। এত গরম! টিনের ঘর না? পুরা গরমটা ঘরে লাগে৷বাইরের চাইতে ঘরে গরম বেশি।

কাজের প্রয়োজনে দিনভর বাইরেই থাকেন মামুন। তবে ঘরে থাকতে হয় তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মাসুমা জানালেন তার ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, পাকঘর (রান্না ঘর) একটা তিন ফ্যামিলির জন্য। এমনেই টিনের গরম। তার ওপরে চুলা জ্বললে পুরা পাকঘর আগুনের মতো গরম থাকে। মনে হয় জাহান্নামে দাঁড়াইয়া রান্দি।

মাসুমা জানান, তাদের রান্না ঘর থেকে তাপ বের হওয়ার মতো কোনো ফ্যান নেই। গরমে শরীরে জ্বালাপোড়া করলেও দিনে একবারের বেশি গোসল করার ব্যবস্থা নেই। কারণ এ ধরণের বাসায় পানির মোটরও ছাড়া হয় হিসেব করে।

মাসুমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন পারভীন আক্তার। ঘামে পুরো শরীর ভেজা। এই গৃহিণী বলেন, এত গরম আমি আমার জীবনেও দেখি নাই। রান্না করতে গ্যালে দমটা বন্ধ হইয়া যায়।

শুধু মামুন-মাসুমা, পারভীনদের বাসায় নয়। একই চিত্র অন্যান্য টিনশেড বাসাগুলোতেও।

পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে বস্তির ঘরগুলোতে। উপরের টিনের ছাউনির পাশাপাশি এসব ঘরের প্রাচীরও টিনের তৈরি। ফলে উত্তাপ যেনো উনুনের আগুনকেও হার মানায়।

মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিং এলাকার বস্তির ঘরে বসবাসকারী মানুষের বেহাল দশা সামান্য তাকালেই দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলা বস্তির বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই বাইরে কাজে থাকেন। কাজ শেষে ফেরেন বিকেলে বা সন্ধ্যায়। তবে ঘরে ফিরেও স্বস্তি জোটে না।

বস্তির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, সারাদিন রিকশা চালাই। আগে পায়ের রিকশা চালাইতাম। গরমে আর পারি না। এহন অটো চালাই। রাইতে বাসায় আইসাও গরমে ঘুমাইতে পারি না। এত গরম।

বস্তির আরেক বাসিন্দা রেশমা বেগম বলেন, সারাদিন বাসাবাড়িতে কাজ করি। নিজের ঘরে আইসাও রান্দা লাগে৷বিল্ডিং এ তো গরম একটু কম। আমগো এইখানে গরম অনেক বেশি। রাইতে ঘুমানও যায় না।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন