দেড় টাকার লাউ খুচরা বাজারে ৫০ টাকা!

  27-03-2024 10:28AM



পিএনএস ডেস্ক: বরিশাল নগরীর বহুমুখী সিটি পাইকারি কাঁচা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী গণেশ চন্দ্র দত্ত মঙ্গলবার সকালে ৩৩ টাকা কেজি দরে ঢেঁড়স বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে স্ত্রীর ফোনে নগরীর নাজিরপুলে ভ্রাম্যমাণ খুচরা সবজি বিক্রেতার দোকানে দাঁড়িয়ে ঢেঁড়সের দাম জিজ্ঞেস করে অবাক বনে যান তিনি। যে ঢেঁড়স তিনি (গণেশ) তার পাইকারি দোকানে কেজি ৩৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন সেই ঢেঁড়সই খুচরা বিক্রেতা চাইছেন ৯০ টাকা।

এ ঘটনায় দুই যুগ ধরে পাইকারি ব্যবসা করা গণেশ চন্দ্র তাৎক্ষণিক ক্ষোভ ঝাড়েন উপস্থিত জনতার মাঝে। এমনিভাবে এদিন পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতি পিস লাউ গড়ে ৩৫ গুণেরও বেশি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে চিচিঙ্গার (রেখা) দাম বেড়েছে সাড়ে ১৬ গুণ পর্যন্ত। নিম্নমানের এক কেজি বেগুন দুই টাকায় কিনে খুচরা বিক্রেতারা ১৫ গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করেছে।

ফলে পাইকারি বাজার থেকে কেনা পণ্যের ক্রয়মূল্যের চেয়ে ২ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে সবজি বিক্রি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সরেজমিন খুচরা বাজারের চেয়ে ভ্যানগাড়িতে সবজি সাজিয়ে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে দামের পার্থক্য বেশি দেখা গেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, খুচরা বাজারে সবজি বিক্রেতাদের মুনাফার কথা ছিল ক্রয়মূল্যের শতকরা ২৫ ভাগ। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই নিয়ম কাউকেই মানতে দেখা যায়নি।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, আড়তদার কেজিপ্রতি ১ টাকা দিয়ে নিজদোকান পর্যন্ত আনতে যাতায়াত ও অন্যান্য খরচসহ ২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেওয়া এমন তথ্যের পরও নানা অজুহাতে বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাই অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে।

তথ্যমতে, চলমান সবজির মৌসুমে উৎপাদন বেশি হওয়ার পাশাপাশি রমজানে সবজির চাহিদা কম থাকায় পাইকারি আড়তে দামে ধস নেমেছে। ফলে মঙ্গলবার পাইকারি আড়তে বিভিন্ন সাইজের আড়াইশ পিস লাউ মাত্র সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে পাইকারি বাজার থেকে গড়ে প্রতি পিস লাউয়ের দাম পড়েছে ১.৪০ পয়সা। একই লাউ গড়ে ৩৫ গুণেরও বেশি দাম বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়।

পাইকারি বাজারে এক কেজি চিচিঙ্গা (রেখা) দেড় থেকে আড়াই টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারে চিচিঙ্গা সাড়ে ১৬ গুণ এবং ১৪ গুণ বেড়ে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সকালে এই চিচিঙ্গা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে গরুকে খাওয়াতে বাধ্য হয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ভালো মানের বেগুন প্রতি কেজি পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়। একই বেগুন খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৬ গুণ বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নিম্নমানের ৫০ কেজির এক বস্তা বেগুন এদিন পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১শ টাকায়। সেই হিসাবে দুই টাকায় এক কেজি বেগুন কিনে খুচরা বিক্রেতারা ১৫ গুণ বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে।

ঢেঁড়স ৩২ থেকে ৩৩ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা ক্রয়মূল্যের আড়াই থেকে প্রায় পৌনে তিনগুণ বেশি।

একইভাবে পাইকারি বাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকায় প্রতি কেজি শসা কিনে খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছে খুচরা বিক্রেতারা। শসা বিক্রির ক্ষেত্রে আড়াই গুণ দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তেমনি পাইকারি বাজারের ২৫ টাকার করলা খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে দাম বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। মানভেদে এক কেজি মিষ্টিকুমার বিক্রি হয়েছে ১৩, ১৪ ও ১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ২ গুণ বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নগরীর সোনারী আইসক্রিম মোড় এলাকার বাসিন্দা বহুমুখী সিটি পাইকারি কাঁচা বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী ভুক্তভোগী গণেশ চন্দ্র দত্ত বলেন, সবজি ব্যবসায় ধস চলছে, তাই পাইকারি বাজারে দাম খুবই কম। সকালে আড়াইশ পিস লাউ মাত্র সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি করেছি।
ঢেঁড়স বিক্রি করেছি ৩২ থেকে ৩৩ টাকায়। সেই ঢেঁড়স আমার কাছেই খুচরা দোকানদার পাইকারি দামের চেয়ে পৌনে তিনগুণ বেশি ৯০ টাকা চেয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, তারা কতটা বেপরোয়া। এদের নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।

বহুমুখী সিটি পাইকারি কাঁচাবাজারের নূর বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী এমরান হোসেন বলেন, বেগুনের চাহিদা কম। তাই নিম্নমানের ৫০ কেজির এক বস্তা বেগুন মাত্র ১শ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা ডাকাতি করছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক সুমি রাণী মিত্র বলেন, খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে বিষয়টি দেখে কার্যকরী পদক্ষেপ নেব।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল মারুফ বলেন, আমাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।যুগান্তর


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন