ঝালকাঠি কি আইয়ামে জাহিলিয়ায় ফিরে গেছে?

  20-05-2017 07:40PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : নারী-শিশু নির্যাতনের মিছিল চলছে দেশব্যাপী। সুষ্ঠু বিচারের অভাবে এমন নির্যাতনের ঘটনা গাণিতিক হারে বাড়ছে। একটি ঘটনার পর সঠিকভাবে বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হলে এমন নারকীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

ঝালকাঠিতে ঠনকো চুরির অপবাদে ১০ বছরের শিশুকে বস্তায় বেঁধে নির্যাতনের পর এবার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে আসামী পক্ষের লোকজন। দুই আসামী গ্রেপ্তার হলেও মূল আসামীসহ অন্যরা এখনো পলাতক। নির্যাতিত শিশুর সহপাঠিরা স্কুলে বিক্ষোভ করে এ ঘটনার বিচার দাবী করেছে। শিশুরা জেগে উঠলেও অন্যদের ঘুম ভাঙতে দেরি হচ্ছে কেন?

ঝালকাঠি জেলা সদরের আলিপুর গ্রামের ১০ বছরের শিশুর সাগর হাওলাদারকে স্থানীয় মসজিদ ঈমামের ২ হাজার টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গত ১৪ মে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বস্তায় ভরে নির্মম নির্যাতন করে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েই নির্যাতনকারীরা খান্ত হয়নি, শিশুটির দুই হাতে সুই ঢুকিয়ে এবং কাঁটা ফুড়ে বর্বর নির্যাতন করা হয়! মানুষ রূপী ওই হায়নাদের একই রকম শাস্তি চেয়েছে এলাকার অবুঝ শিশুরা।

নির্মম নির্যাতনের পর এবার মামলার আসামীদের লোক শিশুর পরিবারকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। মামলা দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অসহায় দরিদ্র পরিবারটি। মোট ৯ আসামীর দুজন গ্রেপ্তার হলে প্রধান আসামীসহ অন্যরা এখনো পলাতক। তবে পুলিশ বলছে, সব আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মূলত পুলিশের অবহেলায় প্রভাবশালীরা অসহায় পরিবারকে এবং পরিবারের নিরপরাধ শিশুকে নির্মম নির্যাতনের সুযোগ পায়।

শিশুরা কী আর বুঝে। তার পরও এই সমাজের কীটসমরা নানা সময়ে নানাভাবে তাদের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালায়। মানবতার প্রতি চরম বৈরী একটি চক্র অবুঝ শিশুদের সঙ্গে নির্দয় আচরণের অপচেষ্টা চালায়। অথচ শিশুদের প্রতি সদা সদয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।

শিশুরা সবার কাছে সমান আদর পাওয়ার অধিকারী। তাদের সঙ্গে সবার সদাচার করা অবশ্যকর্তব্য। আদর-সোহাগে তাদের জীবনটা ভরে দেয়া উত্তম। কে কার সন্তান, সেটা না দেখে প্রতিটি শিশুকে নিজের সন্তানের মতো করে দেখতে হবে। তাদের সঙ্গে আচার-আচরণ, বাক্য প্রয়োগ ও শব্দ চয়নে অধিক সতর্ক থাকতে হবে।

শিশুদের নির্যাতন তো দূরের কথা, তাদের কচি মনে দাগ কাটে- তাদের সঙ্গে জেনে-বুঝে এমন কোনো গর্হিত কাজ করা সমীচীন নয়। তাদের জীবনটা যতটুকু পারা যায় আদর-সোহাগে ভরে দিতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মানবীয় গুণাবলিসম্পন্ন শিশু যদি আমরা জাতিকে উপহার দিতে চাই, তাহলে তাদের প্রতি এই বয়সেই অধিক যত্নবান হওয়া জরুরি।


শিশুর কচি মনকে কোনোমতেই বিষিয়ে দেয়া যাবে না। তার ভুলগুলোকে বুঝিয়ে শুধরে নিতে হবে। জোরপূর্বক কোনোকিছু তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। শিশুকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, সমাজের সবার আরো দায়িত্বসচেতন হতে হবে। আপন ভুবনে ওদের ঠাঁই করে দিতে হবে। হেসে-খেলে, নেচে-কুদে বেড়ে ওঠার যে অনাবিল আনন্দ, সে পরিবেশ শিশুদের উপহার দেয়া সময়ের দাবি।

ঝালকাঠির যে নরপশুরা শিশু সাগর হাওলাদারকে বস্তায় ভরে নির্মম নির্যাতন করে পা ভেঙে দিয়েও খান্ত হয়নি, তার কচি দুটি হাতে সুই ঢুকিয়ে এবং কাঁটা ফুড়ে দিয়েছে- তাদের এখনো কেন চৌদ্দ শিকে ঢোকানো হয়নি? তাদের একই রকম শাস্তি ঝালকাঠির সমাজ কেন দিতে সক্ষম হয়নি?

ঝালকাঠি কি আইয়ামে জাহেলিয়ায় ফিরে গেছে, না আইয়ামে জাহেলিয়াকেও হার মানিয়েছে! সেখানে প্রশাসন আর কত জেগে ঘুমাব্যে! ঝালকাঠির মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা আর কবে জাগবেন! তারা শিশুদের কাছ থেকেও শিখছেন না। ঝালকাঠির নির্যাতিত শিশুর সহপাঠিরা স্কুলে বিক্ষোভ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে, তাদের প্রতি শতকোটি সালাম। ধিক্ সেখানের অথর্ব সমাজ, প্রশাসন ও মানবাধিকার কর্মীদের।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন