তরুণীর সাথে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার অবৈধ সম্পর্ক!

  19-11-2017 01:04PM

পিএনএস, রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ আতাউর রহমানকে স্বামী দাবি করে সুমি আক্তার নামে এক তরুণী শনিবার বিকেল হতে অনশন শুরু করেছে। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সুমি আক্তার শনিবার বিকেলে গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসের নাম এসে আতাউর রহমানকে স্বামী দাবি করে তার খোঁজ নেয় সে কোথায় আছে। আতাউর রহমান বিষয়টি বুঝতে পেরে সুমি আক্তারকে অফিসের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখে। দীর্ঘক্ষণ এক তরুণী গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলকায় জানাজানি হলে স্থানীয়রা সেখানে ভিড় জমায়। পরে তরুণীকে ভেতরে নিয়ে একটি বাসায় রাখে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমানকে স্বামী দাবি করা সুমি আক্তারের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার উমানন্দপুর গ্রামের মোঃ মুনসুর আলীর একমাত্র মেয়ে।

সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে পড়া অবস্থায় একই উপজেলার মধুপুর বাকারা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আতাউর রহমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আস্তে আস্তে সেই সম্পর্ক অনেক গভীরে পৌঁছায়। সেই সময়ে বিয়ের কথা বললে আতাউর রহমান কৌশলে এড়িয়ে যেত। আতাউর রহামান একই কলেজের ছাত্র। পাশাপাশি আতাউর রহমান মেসে থাকত ফলে বিয়ের প্রভলন দেখিয়ে তাকে নিজ স্ত্রীর মতো ব্যবহার করত। সুমি আক্তারের দাবি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গভীর হওয়ার পরেও অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ঠকিয়েছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে গত ২৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মিথ্যা প্রভোলন দেখিয়ে জাল নিকাহ নামার মাধ্যমে বিবাহ করে আমাকে ভোগ করেছে মর্মে উপ-পরিচালক রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের কাছে ডাকযোগে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল হতে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন থেকে সে আমাকে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে মেলামেশা করে আসছে। আতাউরকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে বলে বিয়ে করব কিন্তু শর্ত থাকবে যে আমার চাকরি না হওয় পর্যন্ত প্রকাশ করা যাবে না। চাকরি হলেই বাড়িতে নিয়ে আসব। তার কথা মতো আমিও রাজি হই। এই কথা হওয়ার পর সে আবার মেলা মেশার প্রস্তাব দেয়, এভাবেই সে মেলামেশা করত।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে ছাত্রী নিবাস হতে বাড়ি আসব শুনে আতাউর আমাকে বলে আমিও বাড়ি যাব আমার রুমে আস একসঙ্গে যাব। আমি যেতে না চাইলে একইভাবে ভয় ভীতি দেখায়। আমি বাধ্য হয়ে কুড়িগ্রাম মুমু ছাত্রাবাসে যাই।

আমি রুমে প্রবেশ করা মাত্রই আতাউর রহমান তালাবন্ধ করে বাইরে চলে যাই। সে নিজের মোবাইল ও আমার মোবাইল নিয়ে বন্ধ করে রাখে। সন্ধ্যার পর রুমে আসলে আমি অনেক কান্নাকটি করে পায়ে পরে আকুতি করি ছেড়ে দিতে। কিন্তু সে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে যদি কথা বল তাহলে জবাই করে বস্তায় ঢুকিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেব। তখন আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। সেদিন রাত আনুমানিক রাত ৮টার দিকে তিনজন ছেলে ও একজন হুজুর রুমে আসে। আমি ভয়ে কাঁপছিলাম তখন আতাউর বলল ভয়ে কোনো কারণ তোমার বিয়ে হবে। আমার সঙ্গে। এই কথা বলে মোটা বইয়ের মধ্যে আমার সই নিল ও আতাউরও সই করল।

ছেলেগুলো বলল কোন চিন্তা কর না আমরা আছি। এই বলে সেদিন বিয়ে রেজিস্ট্রি এবং পড়ান সম্পন্ন করা হয়।

পরের দিন সকাল ১০টায় উলিপুর গবার মোড়ে রেখে যায়। এরপর আতাউর রহমান আমাকে বিবাহের নকল দিয়ে বলে যে আজ থেকে আর যেন জোর করা না লাগে সব ডকুমেন্টস পেয়ে গেছো। বিবাহের পর সে বলে আমার চাকরি হচ্ছে তুমি আমাকে তোমার জমানো টাকা দাও কারণ আমার মানে তোমার। তুমি তোমার মাকে বল। এই কথা শুনে সরল বিশ্বাসে আমার মাকে হাত পা ধরে রাজি করিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। কথা চলাকালীন অবস্থায় একদিন হঠাৎ করে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে কথা না বলার ভাব ভঙ্গীমা দেখে আমি কয়েকজন ব্যক্তিকে বিষয়টি জানিয়েও কোন সমাধান করতে পারিনি। এমনকি আতাউর রহমানের ভগ্নিপতি, বাড় ভাইসহ সকলকে জানিয়েছি কিন্তু কোন সমাধান করতে পারিনি।

এসব বিষয় নিয়ে আমার এলকায় ব্যাপক জানাজানি হয়েছে। আমার পিতা-মাতা আর বাড়িতে থাকতে দেয় না। গ্রামের লোকজনেরও মুখেও কটু কথা শুনতে হয়। মুখ দেখাতে পারি না। আমাকে না জানিয়ে সে গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছে। আমার আর বিয়ে আসে না যে আমি নষ্ট মেয়ে।

আতাউর আমাকে নষ্ট করেছে। সে সহ তার ভায়েরা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। আমি আর কিছু চাই না তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে ঘর সংসার করতে চাই। তার আরেকটি বউ আছে বললে জানায় তার ৫টি বউ থাক আমি তারই সংসার করব।

সুমি আক্তারের এমন অনশনের খবর শুনে ফায়ার সার্ভিস রাজশাহী উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এসে দুই জনের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। টাকা পয়সা দিয়ে বিষয়টি সমধানের জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সুমি আক্তার বলেন কোটি টাকা দিলেও আমি তাতে রাজি নই। আমি তাকেই বিয়ে করব।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আতাউর রহমান দাবি করেন। কালেজে পড়া অবস্থায় আমার দুই চারদিনের পরিচয় তার সঙ্গে তেমন সম্পর্ক ছিল না। বিয়ে করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলে আমি বিয়ে করিনি সে মিথ্যা কাবিন নামা দিয়ে এমন দাবি করছে। এর আগেও এমন দাবি করেছিল এটি আদালতে মীমাংসা হয়েছে বলে জানান। তবে সুমি আক্তার বলেন কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে কাগজপত্র দেখে বোঝা যাই কোন মীমাংসা হয়নি।

আতাউর রহমান সুমি আক্তারকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে নারাজ এবং বিয়েও করব বলে দাবি করেন এদিকে সুমি আক্তার বলেন স্ত্রীর স্বীকৃতি ছাড়া আমি একপাও পিছু হটবো না। এই নিয়ে এখন দুজনের মধ্যে চলছে তুমুল দণ্ড।

এদিকে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম, সহাকরী উপ-পরিচালক আহসান কবির ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা উপ-সহকারী পরিচালক মনোরঞ্জন সরকার শনিবার গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে এসে মীমাংসা না করতে পারায় দুঃচিন্তায় রয়েছেন।

রাজশাহী উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সমঝোতা করার তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা বলতে পারব না। সুমি আক্তারকে শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্যর বাড়িতে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসিকে অবগত করে রাখা হয়েছে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন