রায়ট ও সম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি

  12-11-2016 12:48PM

পিএনএস (মোঃ রুহুল আমীন চৌধুরী) : ১৯৪৭ সালের পূর্বে ও কিছুকাল পরে স্বল্প সময় পর্যন্ত অর্থাৎ বৃটিশ ভারত থেকে পৃথক হয়ে পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান সৃষ্টিরর আগে ও পরে কিছু সময় ধরে হিন্দু-মুসলমান “রায়ট” কিছু কাল ধরে স্থায়ী ছিল। সেই দাঙ্গামায় বরঞ্চ মুসলমানরাই বেশী রকম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। স্বাধীনতার আগ থেকেই বৃটিশদের দোশর হিন্দু উগ্রবাদিরা মুসলমানদেরকে শারীরিক, মানষীক, ও স্থাবর ও অস্থাবর বাড়ীঘর ও সম্পদের উপর ব্যপক হস্তক্ষেপ করতে থাকে। এমন কি জান মালের উপর নিরাপত্তাহীনতা চরম আকার ধারন করে। বরঞ্চ বৃটিশদের উৎসাহ ও ইঙ্গিতেই কট্টর হিন্দুরা চড়াও হয়ে ছিল। যাকে ঐ সময় হিন্দু মুসলমান রায়ট বা দাঙ্গা বলা হতো।

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট আমরা ভারত থেকে বিভক্ত ও স্বধীনতা লাভ করার পর কিছুদিন ধরে আগের রায়টের জের ধরে পাকিস্তান অংশের কিছু মুসলমান বিচ্ছিন্ন ভাবে হিন্দুদের উপর চড়াও হয়। এটা বেশিদিন স্থায়ী ছিলনা। ধীরে ধীরে আমাদের মুসলমানদের মধ্যে ধের্য্য ও সহনশীলতা ফিরে আসল। আমাদের পাকিস্তান অংশের মুসলমানরা বসবাসরত হিন্দুদের সাথে সোহার্ধপূর্ন সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ততক্ষন পর্যন্ত হিন্দুস্থান অংশের হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লেগেই আছে। পূর্ব বাংলা অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানটি হিন্দুস্থান বেষ্টনীর ভেতরে থাকার কারনে তাদের কপিতায় রিপিউজি বিনীময়ের মাধ্যমে হিন্দু মুসলমানের উভয়ের মাঝে স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ও বিনীময় হতো।

আমরা এতটুকু জানি যে, ঐ সময় উগ্র হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতীত ও বিতারীত মুসলমানদের বেশীরভাগই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ফেলেই শুধু পরনের বস্ত্র নিয়ে কোন রকম পাকিস্তান অংশের উপস্থিত হতেন। মুসলমানরা রেখে আসা সম্পদ বা মালামাল হিন্দুস্থান সরকার কাল বিলম্ব না করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বন্দোবস্তসহ সরকারী করে নিয়েছেন । আমাদের পাকিস্তান অংশের অনেক হিন্দু তাদের রক্ত সম্পর্কের প্রয়োজনে কিংবা হিন্দু আবেগে দেশত্যাগ করার কারনে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমাদের এই অংশের সরকার গুলো আজ অবাদি দেবত্ত সম্পত্তি ও শত্রু সম্পত্তি হিসাবে গন্য করে রেখেছেন।

উল্লেখ্য যে, তারপর ও আমাদের তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুমুসলমানরা পরস্পরের সাথে অত্যন্ত সু-সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দিনাতি পাত করেছেন এবং এখন ও কারেই চলেছেন। এখনও আমরা মিলে মিশে দিন যাপন করছি। মুসমানরা বিয়েসাদি কিংবা বিভিন্ন উৎসবে হিন্দুদেরকে দাওয়াত করে থাকতেন। আবার হিন্দুরা তাদের পূজা পর্বনে বা তাদের বিবাহসাদিতে মুসলমানদের নিমন্ত্রন করতেন। হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে এই সংস্কৃতি বহুকাল আগেই থেকে চলে আসছিল। আমাদের স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশে সকল ধর্ম বর্ন গোত্র নির্বশেষে আমরা বসবাসের অঙ্গিকারাবদ্ধ। আরও উল্লেখ্য যে আমাদের মরমী কবী ,শাহ আ: করিম যথার্তই একটি গান রচনা করেছেন। বাঙ্গলী হিন্দুমুসলমানের উপর সৃতিচারন মূলক ঃ

যেমন-
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদ গাইতাম

হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
জারি গান, বাউল গান আনন্দের তুফান
গাইয়া সারিগান নৌকা দোড়াইতাম

ঊর্ষা যখন হইত, গাজির গান আইত,
রংগে ঢংগে গাইত আনন্দ পাইতাম।।

কে হবে মেম্বার, কে বা গ্রাম সরকার
আমরা কি তার খবরও লইতাম।।
হায়রে আমরা কি তা খবরও লইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।।

বিবাদ ঘটিলে পঞ্চায়েতের বলে
গরীব কাংগালে বিচার পাইতাম।।

মানুষ ছিল সরল ছিল ধর্ম বল।।
এখন সবাই পাগল বড়লোক হইতাম।।
করি ভাবনা সেই দিন আর পাব নাহ।

আদিকাল থেকেই হিন্দু মুসলমানরা সামাজীক সম্পীতির মাধ্যমে জীবন যাপন করে আসছে। হিন্দু মুসলমান বোদ্ধ ও খ্রিষ্টান পাশাপাশি বাড়ী ঘর ও একই আইলে জমিজামা চাষাবাদ হয়ে আসছে। মুসলমানরা যখন ভাইয়ে ভাইয়ে জমি জামা নিয়ে ঝগড়া ঝাটি ও মামলা মকাদ্দামা হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় পাশাপাশি হিন্দুদের সাথে কোন কোন কারনে অনুরূপ কিছু ঘটতেই পারে। এবং আবার মিল মিশও হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো উদ্দেশ্য প্রনভিত কতগুলো অকল্যানকর, অসুভ বাক্য ও শব্দ সাম্প্রাদায়িক বা অসম্প্রাদায়িক দাঙ্গা বা হাঙ্গামায় রূপায়িত হল কেন? এবং কখন থেকে এ শব্দ বা বাক্য গুলো যুক্ত হলো ঐ দিকটা আমাদের খুজে বের করতে হবে।

উজ্জল সূর্যের মতো সত্য আমাদের রাজনীতি যখন দূর্বল রূপ লাভ করে ও গনতন্ত্রনের উপর আস্থা হারিয়ে পেলে তখনই পারাশক্তি নির্ভরশীল হয়ে পরে। ঠিক সেই থেকে আমাদের সামাজিক ও রাজনীতে চির দরেছে। পরাশক্তি নির্ভরশীলতায় ক্ষমতায় আশা ও যাওয়ার হাতিয়ার হিসাবে আমাদের সংখ্যালুঘুদের উপর মাঝে মাঝে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তখন সংখ্যা লঘুরা রাজনীতির স্বীকার হয়। এটা হলো প্রভুদের সন্তুষ্টির প্রতিযোগিতায় কে কতটা অসূব নৈপুন্যতা দেখিয়ে মন জয় করা যায়।

অপর দিকে তাবেলা হত্যা, খ্রিষ্টান ধর্ম জাজগ হত্যা, বৌদ্ধ মন্দির গুড়িয়ে দেওয়া, ও ব্রহ্মন্যবাদী হিন্দুদের মন্দিরে ও বাড়ী ঘর আক্রমন , এছারা কতিপয় উগ্র হিন্দু দ¦ারা মুসলমানদের কাবা ও ধর্মীয় অনুভ’তিতে চরম আঘাত হানা, এসব কিছুতে যেন তথাকথিত রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরাশক্তি মনানশিলতায় ক্ষমতার পালাবদলে এহেনো প্রতিযোগিতা যেন আমাদেরকে চরম ঘোর আমানিসার দিকে দাবিত করছে। জাতি আজ আতঙ্কিত , সংকিত ও চিন্তিত। এই হলো বাস্তবতা।

আসুন আমরা বাঙ্গালী জাতি হিসাবে কিবা হিন্দু কিবা মুসলমান আমরা পরস্পরের প্রতি স্নেহ ও শ্রদ্ধাবোদের সংস্কৃতি ও জাতিয়তা বোধ গড়ে তুলি। আমরা নিজ নিজ ভাবে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার পালাবদল করি। জনগন তাদের সুবিধামত ভোটের মাধমে ক্ষমাতায় বসাবে। আসুন আমরা এই সহনশীল রাজনীতি ও গনতন্ত্রনের সংস্কৃতি চালু করি। তাহা হইলে আমাদের সম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে না।

লেখকঃ রাজনীতবিদ ও সমাজসেবক, সহ-সভাপতি কচুয়া কল্যাণ সংঘ, ঢাকা । সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আন্তঃ বিঃ বিঃ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, সাবেক চাঁদপুর জেলা পরিষদে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাচিত সদস্য এবং জাতীয় পার্টির নেতা।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন