মাদকসেবীদের কুফল, সকলের জেনে রাখা উচিৎ

  25-02-2017 11:27AM


পিএনএস ডেস্ক: বিভিন্ন উদ্ভিদজাত দ্রব্য বা রাসায়নিক ঔষধ, যা মানুষ স্বাভাবিক প্রয়োগ (যেমন চিকিৎসা) ব্যতিত ক্ষণিকের আনন্দ-ফুর্তি বা বিলাসিতাবশতঃ বা হতাশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অননুমোদিতভাবে গ্রহণ করে থাকে এবং ধীরে ধীরে তাতে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে, সেগুলোকে মাদক দ্রব্য বলা যায়। নেশা বলতে বুঝায়, কোন মন্দ কিছুতে অত্যাসক্তভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়া, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ধফফরপঃরড়হ। মাদকে নেশাগ্রস্থ হয়ে মানুষ বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি শুধু নিজেরই ক্ষতি করে না; ক্ষতি করে তার পরিবারের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের। যুব সমাজের এ মাদকাসক্তি জাতি তথা বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই, আমাদের তরুণ সমাজকে ক্ষতিকর ড্রাগ ও মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হবে।

মানুষের জীবনধারণের জন্য ভাত, রুটি, মাছ, মাংস ও বিভিন্ন স্থান ভেদে বিভিন্ন খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এসব প্রয়োজনীয় খাদ্য ছাড়াও কর্মক্লান্ত মানুষ দেহ ও মনের অবসাদ ও ক্লান্তি নিরসনের জন্য কিছু উদ্দীপক পানীয় এবং খাদ্য সামগ্রীর অনুসন্ধান করে আসছে আদিকাল থেকে। অনুসন্ধানের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে হাজার রকমের উদ্ভিদ, যা থেকে মানুষ আবিষ্কার করেছে উদ্দীপক পানীয়সমূহ। এ পানীয়সমূহ দু’প্রকার-ক) অ্যালকোহলমুক্ত অ-নেশাকর পানীয়। যেমন-চা, কফি, কোকোকোলা, সিরাপ, স্কোয়াশ (অজারিত গাঁজনমুক্ত ফলের রস) ইত্যাদি। খ) অ্যালকোলহলযুক্ত নেশাকর দ্রব্য; যেমন- মদ, বিয়ার, ব্র্যান্ডি, জিন ইত্যাদি।

স্মরণাতীতকাল থেকে অ্যালকোহলযুক্ত দ্রব্যের সাথে মানুষ পরিচিত, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এসব দ্রব্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালকোহলযুক্ত এ সকল নেশাকর দ্রব্য বিষাক্ত। এসব পান করলে স্নায়ূবিক ও কর্মক্ষমতার উপর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত পান করলে সেরিব্রিয়াল উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় বাহ্যজ্ঞান লোপ পায়। নেশাকর পানীয় পানের ফলে হজম শক্তি, রক্ত চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কমে যায়ে। দেহের স্বাভাবিক সজীবতা হ্রাস পায়; বমি বমি ভাব, ডাইরিয়া, অস্বস্তি, ডিসপেপসিয়া ও দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া-কর্মে গোলোযোগ সৃষ্টি হয়। যকৃতের জীবনী-শক্তি নষ্ট করে দেয়। থায়ামিন ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে হৃদযন্ত্রে গোলোযোগ সৃষ্টি হয়। ক্রনিক গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস, প্যানক্রিটাইটিস ও পাকস্থলী আলসার দেখা দেয়। ক্ষুধামন্দা ও খাদ্য প্রাণ ঘাটতি-লিভার সিরোসিস সৃস্টি হয়। দীর্ঘদিন নেশাকর পানীয় পানের ফলে হাত পায়ের স্নায়ূবৈকল্য দেখা দেয়। একে অ্যালকোহলিক পেরিফেরাল নিউরাইটিস বলে।

স্থানীয়ভাবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গুড়, চিনি, ভাত, চিড়া ইত্যাদি পঁচিয়ে জারিত করে গাঁজন পদ্ধতি দ্বারা দেশি মদ ও তাড়ি তৈরি করে। এসব দেশি মদ তেমন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং যথাযথ পদ্ধতিতে তৈরী হয়না বলে ইথানলের সাথে মিথানল ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়। যা সেবনে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া, বিশুদ্ধ ইথানল আমদানিতে আবগারি-শুল্ক দিতে হয়। তাই শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত ইথানলের সাথে বিষাক্ত পদার্থ মিথানল, পিরিডিন, বেনজিন ইত্যাদি মিশ্রিত করে উবহধঃঁৎবফ অষপড়যড়ষ হিসেবে শুল্কমুক্ত করে আমদানি করা হয়। এসব অ্যালকোহল বাজারে মদ হিসেবে বিক্রি হয়। যা সেবনে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কিছু অসাধু হোমিও ঔষধ ব্যবসায়ী অবৈধভাবে নিরাপদে অ্যালকোহল বিক্রি করে আসছে মাদক সেবীদের নিকট।

মানুষ তাদের মানসিক তৃপ্তি ও শাস্তির জন্য চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় বিভিন্ন উত্তেজক দ্রব্য নেশা হিসাবে গ্রহণ করে। আসলে এগুলো সুঅভ্যাস নয়। বরং নিয়মতান্ত্রিক ক্রিয়াকান্ড থেকে বিরত থাকার বাহানা মাত্র। বিজ্ঞান অনুশীলনের ফলে আজ জানা গেছে, এসব দ্রব্যের মধ্যে ক্ষতিকর উপক্ষারধর্মী (অষশধষড়রফ) পদার্থ রয়েছে, যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এগুলোর মধ্যে তামাক, পান, সুপারী, চুন, জর্দা, খয়ের কম ক্ষতিকর হলেও মাত্রাতিরিক্ত চরম ক্ষতিকর। কথায় আছে, ধূমপানে-বিষপান। তামাক বিভিন্নভাবে ধুমপানে ব্যবহৃত হয়। তামাকে উপাদান নিকোটিন (ঈ৮ঐ১৪ঘ২) ও নরনিকোটিন (ঈ৯ঐ১২ঘ২) থাকে। তাছাড়া, এর ধোঁয়ায় নাইটোজেন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রো-সায়ানিক এসিড, অ্যামোনিয়া, পাইরিডিন যোগ, রেসিন, উদ্বায়ী তৈল, মিথালন, অ্যাসিটোন, ফরমিক এসিড, বিউটাইরিক এসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ফেনল থাকে; যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের ফলে যক্ষ্মা, ব্রঙ্কাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ক্ষুধামন্দা, হৃদরোগ, ফুসফুসের প্রদাহ, ফুসফুস-দাঁত ও মুখের ক্যান্সার প্রভৃতি মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয়।

এসব ছাড়াও চরস, ভাঙ, গাঁজা ইত্যাদির ব্যবহারও কম নয়। এগুলো মস্তিস্ক উত্তেজক, নিদ্রাকারক, আক্ষেপ নিবারক, মাতাল- কারক, চৈতন্য নাশক, কামোদ্দীপক, বেদনা-নিবারক মাদক; যা অল্প মাত্রার খেলে উল্লাস যুক্ত খেয়াল সৃষ্টি করে, সময় ও স্থান জ্ঞান লোপ পায়; কার্যকলাপে বিক্ষিপ্ততা দেখা দেয়, নিজেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তি বলে অনুমিত হয়, মনের সংকোচ-লজ্জা ও দ্বিধাবোধ অপসারিত হয়। নিয়মিত সেবনে উন্মত্ততা দেখা দেয়। ফলে সেবনকারী বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

বেশকিছু ড্রাগ নেশা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ড্রাগ হলো চিকিৎসায় ব্যবহৃত দ্রব্য যা বেদনানাশক হিসাবে ও অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত হয়। কথিত আছে- ঊাবৎু ফৎঁম রং ধ ঢ়ড়রংড়হ তন্মধ্যে প্যাথেডিন, আফিম, মারফিন, কোকেইন,ফেনসিডিল, হিরোইন অন্যতম। ডিনামাইড আবি®কৃত হয়েছিলো মানুষের কল্যাণে: যা কিনা ব্যবহৃত হলো মানুষ মারার যন্ত্র হিসেবে। তেমনি ড্রাগ মানুষের কল্যাণের জন্য আবি®কৃত হলেও তা পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর আকারে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে যুব সমাজকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে। বর্তমানে ইয়াবা, মারিজুয়ানা, কোকেইন, হেম্প ব্রাউন সুগার, ওপিয়াম ডেরিভেটিভস ইত্যাদি নতুন নতুন মাদক বাজারে আসছে; যা আমাদের যুব সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের গলিতে।

এতকিছু ক্ষতিকর দিক জানা সত্ত্বেও যুবসমাজ কেন এই সর্বনাশা মাদক সেবন করছে? এর কারণের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা,নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ, বংশগত প্রভাব, সুশিক্ষার অভাব, হতাশা, সঙ্গদোষ, বিলাসিতা সর্বোপরি সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। আমাদের জীবনের ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি, দম্পতি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। আমরা প্রত্যেকে যদি ভালো ব্যক্তি হই; আমাদের সংসার গড়ার পর যদি আমরা ভালো দম্পতি হই, তবে আমাদের ঘরে সুসন্তান জন্ম হবে। আমাদের পরিবার হবে একটি আদর্শ পরিবার। আর এভাবে সব পরিবারই যদি ভালো হয়; তবে গড়ে উঠবে একটি আদর্শ সমাজ। সকল আদর্শ সমাজ নিয়েই গঠিত হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র।

আর যদি আমি ব্যক্তি হিসেবে ভালো না হই, আমাদের দাম্পত্য জীবন যদি ভাল না হয়, তবে আমাদের ঘরে সুসন্তান হবে না। দাম্পত্য কলহ, ঝগড়া-ঝাটি ও অশান্তি সন্তানদেরকে হতাশায় নিমজ্জিত করবে। আজকাল বেশিরভাগ দম্পতিই পারিবারিক শান্তি বজায় না রেখে পরিবারকে গড়ে তোলে অশান্তির আগার হিসেবে। যৌতুকের জন্য এবং অন্যান্য নানাবিধ কারণে বেশিরভাগ স্বামী কর্তৃক স্ত্রী‘রা লাঞ্চিত হন। এ সমস্ত পরিবারের সন্তানেরা পরিবারের অশান্তি দেখে সুখের খোঁজে ঘর থেকে বের হয়। নিমজ্জিত হয় হতাশায়। তখন বিভিন্ন নেশাখোরদের খপ্পরে পড়ে। নেশাগ্রস্থ হয়ে সুখ পাবার চেষ্টা করে। আসলে কি সুখ পায়? না, পায়না। পক্ষান্তরে মাদকের করাল গ্রাসে বিনষ্ট হয় তার সম্ভাবনাময় জীবন। স্কুল-কলেজ ত্যাগ করে। বিভিন্ন অসামাজিক-কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা যোগাড় করতে বেছে নেয় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের পথ। কোনো সুস্থ্য, ভদ্র, সুশিক্ষিত পরিবারের সন্তানেরা মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হয় না। কোন অসামাজিক কাজ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী বা ইভটিজিং এর মতো খারাপ কাজে তারা লিপ্ত থাকেনা। যে সকল পরিবারে বাবা-মা ধূমপান বা মাদকে আসক্ত হয়, তাদের সন্তানেরা তাতে আসক্ত হয় বৈকি, কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ বিলাসিতা করে উঁচুতলার লোক দাবি করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদক সেবন করে থাকে। তাদের সামাজিক অপকর্ম যুবকদের মাদকের প্রতি আকৃষ্ট করে। ধূমপায়ী বা মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শে এসে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধূমপান, মদ্যপান ও ক্ষতিকর ড্রাগ ইত্যাদিতে আসক্ত হয়। খারাপ বন্ধু বান্ধবের চাপে পড়ে এবং অনেক সময় কৌতূহল বশে এসব খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে বসে। অনেক সময় রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় এসব মারাত্মক ক্ষতিকারক মাদক দ্রব্য; যেমন-হেরোইন, ইয়াবা, মারিজুয়ানা ইত্যাদি আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে এবং উচুঁতলার লোকদের সহয়তায় তা বাজারজাত করা হচ্ছে। বেছে নেয়া হয় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল, বিভিন্ন এলাকা, পাড়া ইত্যাদি। বিভিন্ন কৌশলে যুবকদেরকে মাদকে আসক্ত করে বাজার সৃষ্টি করে নিজেরা ধনবান হবার পথ সৃষ্টি করে। তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে মাদক পাচারের ক্ষেত্র হিসেবে। মাদক ব্যবহারকারী নতুন নতুন খদ্দের সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে মাদকের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের অসৎ উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশে মাদকের বাজার সৃষ্টির প্রয়াস কম নয়। এর উদ্দেশ্য যেমন অর্থ উপার্জন , তেমনি এদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেঁলে দেয়া। যেভাবেই মাদকাসক্ত হউক না কেন তাদেরকে এই ভয়ঙ্কর ব্যধি থেকে রক্ষা করার জন্য সুস্থ্য ব্যক্তিদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই প্রয়োজন নিজেকে সুগঠিত করা এবং পরিবারকে সুন্দর আদর্শ পরিবারে পরিণত করা। এরপরও যদি দুর্ঘটনাবশত কোন সন্তান মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হয় তাকে সুস্থ্য করার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে। শুধু শাসন করে তাকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। প্রয়োজনে বেশি করে তাকে ভালোবাসা দেয়া, প্রত্যেকে নিজ নিজ সন্তাদেরকে উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষা দিতে পারলে এ ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তাদেরকে ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সকল ধর্মেই মাদক এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূজা-অর্চনায় কেউ কেউ মদ/গাঁজার ব্যবহার আছে বলে মনে করেন। কিন্তু ব্যাপারটি একেবারেই অসত্য। হিন্দুধর্মে মাদক পরিহারের কথা কঠোরভাবে বলা আছে। মাদক দ্রব্যসমূহ কোনো মতেই সাত্ত্বিক আহারের মধ্যে পড়েনা এবং এসব দ্রব্য নিষিদ্ধ ঘোষিত।

ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মেও মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ। মাদক-চোরাচালান ও তার ব্যবহার বন্ধ করার ব্যাপারে রাষ্ট্র তথা প্রশাসনিক ভূমিকা প্রয়োজন। শুধু আইন করলেই হবে না। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ থাকতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা-সমূহকে সমাজের সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান মাদককে ঘৃণা করে সমাজের সর্বস্তরের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্কুল,কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে যা বর্তমান শিক্ষা নীতিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প, উপন্যাস পাঠ্যবইতে যুক্ত করতে হবে। মাদক দ্রব্যের ব্যবহারের কুফল বর্ণনা করে বিভিন্ন প্রবন্ধ পাঠ্যবইতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। মাদক দ্রব্য সমূহের ভালো ব্যবহার সম্পর্কেও ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিত করতে হবে। মোটকথা, মাদক এবং এর ব্যবহারের কুফল সম্পর্কিত বিষয়াবলী সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা দরকার, যাতে যুবসমাজ এ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা অর্জন করতে পারে। নির্বাচিত প্রতিনিধি, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর সকলে একযোগে পাড়ায় পাড়ায় মাদক সেবীদের চিহিৃত করে তাদেরকে প্রথমে মাদক গ্রহনে নিরুৎসাহিত করে এ কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একবার যে নেশাগ্রস্ত হয়; তাকে এ জগৎ থেকে ফেরানো খুবই কষ্টকর কিন্তু অসম্ভর নয়। তাই থেমে থাকলে চলবে না। কোনো ভালো উদ্যোগই বৃথা যায় না। আন্তরিকতা থাকতে হবে। সবচে’ বড় ব্যবস্থা হলো, মাদকের উৎস মূলে হাত দিতে হবে। এর প্রস্তুতি ও চোরাকারবারীর বিক্রি একেবারে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে এবং তা বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।

অনেকেই মনে করেন, বেকারত্বের কারণে হতাশায় পড়ে কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। কারণ, একজন উচ্চ-শিক্ষিত ও উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি, যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অধ্যাপক বা শিল্পপতি/ব্যবসায়ী যদি বাসায় বসে স্ত্রী-পুত্রের সামনে মদ্যপান করে, তবে কি বলা যায় বেকারত্বের কারণে তিনি তা করছেন? তবে এটা ঠিক যে, অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনকারী ব্যক্তিবর্গই মাদকে বেশী আসক্ত। এ উপার্জন যাতে সৎ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার। যাদের উদ্দেশ্য সোনার বাংলা গড়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া তথা ভিশন-২০২১-এর লক্ষমাত্রা অর্জন করা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সরকারের অন্যান্য কর্তাব্যক্তি ও প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিক হলে দেশ থেকে মাদকের বিষবৃক্ষ উৎপাটন করে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব কিছু নয়।
জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ শিকদার)
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
[email protected]

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন