শেরপুরে বিদ্যুতের ভুতুরে বিল, ব্যবহার না করলেও মিটারের চাকা ঠিকই ঘুরছে!

  21-10-2016 03:30PM

পিএনএস,শেরপুর (বগুড়া) : বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও মিটারের চাকা ঠিকই ঘুরেছে। আর এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। তবে বাস্তবে নয় কাগজে কলমে। পল্লী বিদ্যুত সমিতি ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভোলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) দক্ষ কর্মকর্তাদের হাতের কৌসুলী মারপ্যাচে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে মিটারের ডিজিটগুলো। এমনকি ইচ্ছেমত বিল হাঁকিয়ে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন বিদ্যুৎ বিলের কপি। একইসঙ্গে এসব অতিরিক্ত বিল পরিশোধেও বাধ্য করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন থেকেই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অরাজকতা বিরাজ করলেও প্রতিকারের জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কোন উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। ফলে প্রতিমাসে ভুতুরে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

গত মঙ্গলবার বেলা ১২টায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শেরপুর জোনাল অফিসে সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এসময় জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুল্লাহ আল আমিন চৌধুরী তাঁর অফিসকক্ষে বসেছিলেন। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই ১০-১৫জন সেচ ও আবাসিক গ্রাহক তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে উপরোক্ত সমস্যার কথা জানালে তিনি তাঁদেরকে আগামিতে এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

তবে বিগত মাসগুলোর অতিরিক্ত (ভুতুরে) বিল পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনারা বিল দিলে টাকা সরকারের ঘরেই যাবে। একটি টাকাও কারো পকেটে উঠবেনা। আপনাদের হিসাব নম্বরেই জমা থাকবে। আগামিতে বিদ্যুত ব্যবহারের পর সমন্বয় করে বিল দেয়া হবে বলে ডিজিএম আল আমিন চৌধুরী দাবি করেন। এসময় তাঁর অফিস কক্ষের নিচেই আরও ২০-২৫ জন ভুক্তভোগী গ্রাহক অবস্থান করছিলেন।

উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের ফজলুল করিম (হিসাব নং ০৮-২১০-২০০০), সেলিনা বেওয়া (হিসাব নং ০৮-৩৬৭-২৭৫০, বুলু মিয়া (হিসাব নং-০৮-৩৬৭-৭৭৬০), গাড়ীদহ ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ, শফিকুল ইসলাম, ভবানীপুর বাজারের সোলায়মান আলীসহ বিদ্যুৎ বিল দিতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, গেল মৌসুমে তাঁরা সেচ পাম্প ব্যবহার করেছেন। এরপর থেকে তাঁরা সেচ পাম্প বন্ধ রেখেছেন। অথচ তাঁদের বিদ্যুৎ বিল আসা অব্যাহত রয়েছে। তাঁরা সেচ পাম্প না চালালেও তাঁদের নামে বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়েছে।

পাঠানো এসব বিদ্যুৎ বিলের কাগজে মিটার রিডিংয়ের ঘরে লেখা ব্যবহৃত ইউনিটের সঙ্গে মিটারের মিল নেই। এমনকি মিটার বন্ধ থাকলেও গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট ব্যবহারের ঘরে ১০০-২৫০ ইউনিট ধরে তাঁদের নিকট বিদ্যুৎ বিলের কাগজ পাঠানো হয়েছে। এসব ভুক্তভোগী সেচ গ্রাহকরা আরো জানান, অফিসে আসলাম সেপ্টেমরের পাঠানো বিদ্যুৎ বিলের সমস্যার কথা বলতে। অথচ এখানে এসে শুনলাম ভিন্ন কথা। অফিস কর্তারা বলছেন, এসব অতিরিক্তি বিলও পরিশোধ করতে হবে। নইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এদিকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভোলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবির) গ্রাহকদেরও একই অভিযোগ। একজন কর্তার নেতৃত্বে বিদ্যুত বিল নিয়ে চলছে অরাজকতা। মিটার না দেখে ভুতুরে বিল তৈরী, টাকার বিনিময়ে বিল কম-বেশি করা ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

শহরের স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডস্থ অভিজাত মার্কেট উত্তরাপ্লাজার সত্ত্বাধিকারী আব্দুর রহিম মাষ্টার (হিসাব নম্বর-৬৫৫৬৮২২২) অভিযোগ করে বলেন, তিনি চলতি অক্টোবর মাসের গত মঙ্গলবার ১৮তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুত ব্যবহার করেছেন ৮হাজার ৬৫৭ ইউনিট। মিটার রিডিংও তাই রয়েছে। অথচ গত সেপ্টেম্বর মাসের বিলের কাগজে ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হয়েছে ১১হাজার ১০০ইউনিট। অথাৎ প্রায় ৩হাজার ইউনিট বেশি বিল করা হয়েছে। এতে করে তাঁর ৩০হাজার টাকার মত অতিরিক্ত ভুতুরে বিল দিতে হবে বলে তিনি জানান। এভাবে পিডিবির অসংখ্য সাধারণ গ্রাহকদের নিকট থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির বলেন, বিদ্যুত বিলের ক্ষেত্রে ভুলক্রমে এই ধরণের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে ওই বিলের কপিসহ সাদা কাগজে আবেদন করলে ফাইলপত্র দেখে ঠিক করে দেয়া হবে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন