এমপি লিটন হত্যাকান্ডে কাদের খানের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক গ্রেপ্তার

  27-02-2017 07:07PM

পিএনএস, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক এমপি কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের গ্রামের বাড়ির তত্বাবধায়ককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শামীম মন্ডল (৩০) নামের এই তত্বাবধায়ককে পুলিশ গত শনিবার রাতে উপজেলার মন্ডলের হাট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। তবে বিষয়টি গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে পুলিশ। কিন্তু শামীমের বাবা মহর আলী মন্ডলের দাবী তার ছেলেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আটক করে। এতদিন পুলিশ তা স্বীকার করেনি।

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান, এমপি লিটন হত্যায় গ্রেফতার মূল পরিকল্পনাকারী কাদের খান এবং হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া চার কিলার মেহেদী, শাহীন, রানা ও হান্নানের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি শামীম মন্ডলকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে রবিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

শামীম মন্ডলের বাবা মহর আলী মন্ডল বলেন, কাদের খানের বাড়ির দেখাশোনা এবং তার বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষের কাজের সাথে শামীম জড়িত ছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেইসব পুকুর থেকে ধরা মাছ বিক্রি করতে দাড়িয়াপুর হাটে যায় শামীম। হাট থেকে ফেরার পথে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে তিনি ওই এলাকার মানুষের কাছে শুনেছিলেন। কিন্তু গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ থানায় তখন যোগাযোগ করা হলে পুলিশ শামীমকে আটকের কথা স্বীকার করেনি। এতদিন যাবৎ শামীমের কোন খবর না পেয়ে তার পরিবার উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছিলেন।

কাদের খান প্রশিক্ষিত কিলার গ্রুপ ছিনতাই করতো
কাদের খান সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে পিস্তলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে মেহেদী হাসান, শাহীন, শামীম মন্ডল, রানাকে নিয়ে কিলার গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন। তারা মাদকাসক্ত ছিল এবং সুন্দরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছিনতাই করে বেড়াতো বলে পুলিশ জানতে পারে। এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাদের খানের ওই অবৈধ পিস্তল এবং তার দেয়া বুলেটই তারা ব্যবহার করতো। যে কারণে কাদের খান তার লাইসেন্স করা পিস্তলে ব্যবহারের জন্য কেনা ৪০ রাউন্ড বুলেটের সঠিক হিসাব পুলিশকে দিতে পারেনি। পিস্তল ও বুলেট জব্দ করার সময় কাদের খান মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দেন। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব তিনি দিতে পারেনি। এরমধ্যে শুধু ৫ রাউন্ড বুলেট এমপি লিটনের খুনে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১ রাউন্ড তার বাড়িতে প্রশিক্ষণকালে অসাবধানতাবশতঃ মিস ফায়ার হয়। সে হিসেবে ২৪ রাউন্ড বুলেট প্রশিক্ষণসহ ছিনতাই ও রাহাজানি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এমপি লিটনের কিলাররা গত ১ ডিসেম্বর রাতে সুন্দরগঞ্জের ধোপাডাঙ্গায় ফাইম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে। ছিনতাই শেষে তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে পিস্তলের ৬ রাউন্ড বুলেটের ম্যাগাজিনটি ফেলে যায়। যা স্থানীয় জনগণের দেয়া তথ্য অনুযায়ি পুলিশ উদ্ধার করে। লিটন হত্যাকান্ডের পর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বুলেট এবং ওই ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাপ্ত বুলেটের মিল পাওয়ার সূত্র ধরেই পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি কাদের খানের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় এবং খুনের রহস্য উদঘাটিত হয়।

কাদের খানের বাড়িতে পুলিশের এখনও কড়া পাহাড়া
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামে কাদের খানের বাড়ি এখনও পুলিশ কড়া প্রহরায় ঘিরে রেখেছে। কাউকেই সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে সুন্দরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষ প্রতিদিন কাদের খানের বাড়ি দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন। সেই সাথে তারা কাদের খানের সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্য এবং ঘৃণা প্রকাশ করছেন।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন