অদ্রিজার আঁকা সেইছবি

  24-07-2017 05:08AM


পিএনএস ডেস্ক: আগৈলঝাড়া সদরের শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী অদ্রিজা কর। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এ জন্য অদ্রিজা পুরস্কারও পায়। স্বাধীনতার দিবসের কার্ডেও তার আঁকা ছবি স্থান পায়।

স্বাধীনতা দিবসের কার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে এই অভিযোগে গত ৭ জুন তৎকালীন আগৈলঝাড়ার ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করা হয়।

এই মামলার বাদী বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিযয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।

আদালতের সমন পেয়ে ১৯ জুলাই স্বেচ্ছায় বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন ইউএনও গাজী তারিক সালমান।

জামিন শুনানির সময় মামলার বাদী ওবায়েদ উল্লাহ সাজু ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার, এমপি মো. ইউনুসসহ আওয়ামীমনা অর্ধশতাধিক আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করলে পুলিশ সদস্যরা ইউএনওকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায়।

২ ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টার দিকে বিচারক ফের তাকে জামিনের আদেশ দিলে ১০ হাজার টাকা বেলবন্ডে আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্তি পান তিনি। ইউএনও গাজী তারিক সালমানের দুই ঘণ্টা হাজতবাসের ঘটনা নিয়ে চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। এই ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এই ঘটনার পর থেকে ছবি আঁকা শিশু অদ্রিজা করের মাঝেও ভয় কাজ করে। অদ্রিজার পরিবারও পড়ে যায় বিব্রতকর অবস্থায়। তার বাবা বন্দরের শান্তিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সত্ত্বাধিকারী পরিমল কর।

অদ্রিজা জানায়, সে ক্লাস ওয়ান থেকেই ছবি আঁকে। এ জন্য বিভিন্ন সময় অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে তার ভালো লাগে। এ জন্য স্বাধীনতা দিবসের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় সে বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছে। ছবি আঁকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় পুরস্কারও পেয়েছে।

অদ্রিজা আরো জানায়, ছবি আঁকার কারণে আমাকে যে স্যার পুরস্কার দিয়েছেন তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ কারণে আমার এখন ভয় ভয় লাগে।

অদ্রিজা জানায়, পুরস্কার দেয়া স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বাবা ফেইসবুক থেকে আমার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি সরিয়ে ফেলেছে।

অদ্রিজার মা বলেন, এই ঘটনার পর আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে আত্মীয়স্বজনরাও ফোন দিচ্ছে। এর সাথে এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সংবাদ কর্মীরাও আছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। উপজেলা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ছবি স্বাধীনতার দিবসের কার্ডের প্রথম পেইজে এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ছবি কার্ডের পিছনের পেইজে দিয়ে কার্ড ছাপানো হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম হওয়ার শিশুর ছবি প্রথমে পেইজে এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অদ্রিজা করের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডের পিছনে ছাপা হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন