বরিশালে ব্রিজ ভেঙে নিমজ্জিত ট্রলার ৪০ দিনেও উদ্ধার হয়নি

  17-08-2017 10:26PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বন্দর সংলগ্ন পালর্দী-ধামুরা খালে ১০ হাজার ইট নিয়ে সেতু ভেঙে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি সেতুটি পুননির্মাণেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। একাধিক ডুবুরি দল ট্রলারটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেতুটির ভেঙে পড়া অংশের নিচে চাঁপা পড়ে রয়েছে ডুবে থাকা ট্রলারটি। সেতুটি ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে চার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি পুন:নির্মাণ করার।

কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অপরিকল্পিত সংস্কারকেই দায়ি করছে স্থানীয় ব্যবসায়িরা। গত ৪ জুলাই মাদারীপুর থেকে প্রায় ১০ হাজার ইটবোঝাই করে স্টিলের তৈরি একটি ট্রলার ধামুরার উদ্দেশে যাচ্ছিলো। সন্ধ্যার সময় ট্রলারটি ধামুরা মাছ বাজার সংলগ্ন ব্রিজ অতিক্রম করছিলো। খালে স্রোতের তোড়ে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাছ বাজার সংলগ্ন (সড়কের সংযোগস্থল) ব্রিজের নীচের একটি পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে পিলারটি বিধ্বস্ত হয়ে ব্রিজের বিশাল অংশ ভেঙে পড়ে এবং সেই অংশই ট্রলারের ওপর পড়লে ইটবোঝাই ট্রলারটি মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়। সেই থেকে টানা ৪২ দিনে কয়েক দফায় বিভিন্ন অঞ্চেলের ডুবুরি দল ট্রলারটি উদ্ধারের ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এলজিইডির স্বল্প ব্যয় প্রকল্পের অধীনে ১৯৮৯-১৯৯০ অর্থ বছরে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সানুহার-ধামুরা সড়কের উজিরপুর-গৌরনদী-ধামুরা খালের ধামুরা বন্দরের মাছ বাজার সংলগ্ন স্থানে ১২০ ফুট দীর্ঘ ওই লোহার সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯২ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে সেতুটি সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সেতুটি সংস্কারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগের গাফিলতি ও পরিকল্পনার অভাব ছিল। আর অপরিকল্পিতভাবে ওই সংস্কারের কারণেই সেতুটি ধসে পড়েছে। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, সেতুটি সংরক্ষণে ফাউন্ডেশন বা খুঁটির রক্ষণা বেক্ষণ দরকার ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফাউন্ডেশনে কাজ না করে সেতুর আরসিসি ঢালাই ভেঙে ফেলে নতুন করে আরসিসির স্বাব ঢালাই করেছে। যার কারণে ওজন বেড়ে সেতুটি ধসে পড়ার কাজকে তরান্বিত করেছে। এছাড়া গত ছয় মাস ধরে সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীকে বারবার লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তারা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়িরা অভিযোগ করেছে, সেতুটির সংস্কারের নামে কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত ব্যয় করেছে, যা কোন কাজে লাগেনি। বরং সেতুটি ধসে পড়তে সহায়তা করেছে।

এক সঙ্গে বেশি লোকজন ও ভারী যানবহন চলাচলের সময় সেতুটি কেঁপে উঠত। বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এলজিইডির উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউনুস আলী সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়, ওই খালটিতে অসংখ্য ছোট লঞ্চ ও মালবাহী ট্রলার চলাচল করে তাতে প্রায়ই সেতুটিকে ধাক্কা দেয় ফলে সেতুটি দুর্বল হয়। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই সন্ধ্যারাতে ট্রলারের ধাক্কায় ধসে পড়েছে। সেতুটি পুননির্মাণের জন্য দাপ্তরিক কাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন