ওয়াটার বোর্ডের ইউটার্ন (পর্ব-১) ■ বাড়ছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডার জালিয়াতি

  14-11-2021 04:58PM

পিএনএস (মো: শাহাবুদ্দিন শিকদার): বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হঠাৎ করেই ইউটার্ন করছে। ২০০৯ সালের আগে পাউবো’র যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছিল সেদিকেই ফিরছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৯ সালের আগে যে সমস্ত প্রেতাত্মা মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির মহীরুহে পরিণত হয়েছিল সেই চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরাই এখন পাউবো’র কয়েকটি জোনের হর্তাকর্তা। এদের অনেকেই দীর্ঘদিন মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেদেরকে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। অবৈধভাবে আয় করেছিল কোটি কোটি টাকা। তাদের অসহ্য জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক ঠিকাদারই নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে মাঠ পর্যায়ে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে বাধ্য হয়েছিল। অবশেষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবং কঠোর নজরদারী ও নির্দেশনার আলোকে তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের হস্তক্ষেপে পানি উন্নয়ন বোর্ডে গঠিত হয়েছিল টাস্কফোর্স। এই টাস্কফোর্সের খবরদারীর কল্যাণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড দুর্নীতি, অনিয়ম এবং টেন্ডারবাজির দুর্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছিল। দুর্নীতি ও অনিয়ম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের পরে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ব্যাপক মনিটরিং চালিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন। তৎকালীন টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক কাজী তোফায়েল হোসেন একেবারেই দোষ-ত্রুটিমুক্ত লোক ছিলেন সে কথা বলা না গেলেও তিনিই ওয়াটার বোর্ডের দুর্নাম দূর করতে পেরেছিলেন। তার শত্রুরাও তাকে ১০০% সৎ লোক হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হতেন। তিনি তাঁর চাকুরী জীবনে কারো নিকট থেকে এক গ্লাস পানিও খাননি। কন্ট্রাক্টর শেডে কিংবা পাউবো’র রেস্ট হাউজে নাস্তা পর্যন্ত মুখে তুলেননি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কাজী তোফায়েল হোসেন অবসরে চলে যাওয়ার পরে টাস্কফোর্স তার গতি হারিয়েছে। টাস্কফোর্স দুর্নীতির যে সব দৈত্য-দানবকে অনেক চেষ্টা-তদ্বির করে বোতলে ঢুকিয়েছিল তারা এখন টাস্কফোর্সেরই খবরদারী করছে। এটাই টাস্কফোর্সের ট্রাডেজী।

পর্যবেক্ষকমহলের মতে, বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এবং সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার পাউবো’র দুর্নীতি, অনিয়ম এবং টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। তারা তিনজনই দুর্নীতি ও অনিয়মকে একেবারেই প্রশ্রয় না দিলেও মাঠ পর্যায়ে হঠাৎ করেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডারবাজি বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন মনিটরিং করে টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে মাঠ পর্যায়ের যে সমস্ত দুর্নীতির দৈত্য-দানবকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বোতলে বন্দী করে ডাম্পিং অবস্থায় রেখেছিল হঠাৎ করেই বোতলের ছিপি খুলে তারা মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে দাপাদাপি করছে। এর ফলেই পাউবো ২০০৯ সালের দিকে ইউটার্ন করতে শুরু করেছে যা একেবারেই দুঃখজনক। টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় বুড়িগঙ্গা পুনর্বাসন প্রকল্পকে যিনি পথে বসিয়েছেন তিনি নাকি এখন উত্তরবঙ্গে দিনে কি যেন খান আর আর রাতেও অন্য একটি বিষয়ে আসক্ত। এটা এখন পাউবোর কর্মকর্তাদের মুখে মুখে। তিনি সেখানে কি করছেন তা সকলে জানলেও কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার তিতাস নদীর মাটি বাণিজ্যের হোতা এখন পদ্মা পাড়ের বড় কর্তা। ২০১৭ইং সালের সুনামগঞ্জের ট্র্যাজেডীর মাস্টার মাইল্ড এখন অপর একটি জোনে টেন্ডাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে অনেক ভাল কর্মকর্তাও রয়েছেন।

তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিব ৬৪ জেলায় ছোট নদী-খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশবাসীকে কৃতার্থ করেছেন। এর ফলে মৃতপ্রায় ছোট নদী-খাল আবার বেঁচে উঠেছে। তাছাড়া, আশুলিয়ায় পাউবো’র যে পরিমাণ জমি হাতে এসেছে সেটাও প্রশংসার দাবী রাখে। বর্তমানে এই রকম অনেক ভাল কাজই হচ্ছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে নড়িয়ার ডান তীর রক্ষা করায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডারবাজির যে বদনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তার লাগামও টেনে ধরা জরুরী হয়ে পড়েছে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন