ইফতারে খেজুরের বিকল্প নিয়ে ইসলামিক চিন্তাবিদ ও পুষ্টিবিদরা

  10-03-2024 09:43AM



পিএনএস ডেস্ক: রমজান সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে খেজুরের বাজার। সরকার ১০ শতাংশ শুল্কও ছাড় দেওয়ার পরও নানান অজুহাতে আমদানি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।

খেজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আঙুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছেন। গত ৪ মার্চ রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তার এমন বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

ওই দিন বিকেলে এক সমাবেশে শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি বরই দিয়ে ইফতার করবো। আর তুই খেজুর-আঙুর খাবি? তা হবে না, তা হবে না।’

রমজানে খেজুরের বিকল্প বরই হতে পারে? কী বলছেন ইসলামিক চিন্তাবিদ ও পুষ্টিবিদরা জেনে নেওয়া যাক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোজা থাকার পর সুগার লেভেল কমে যায়। আর ইমিডিয়েট সুগার সোর্স হিসেবে খেজুর খুব ভালো কাজ দেয়।

‘খেজুরের বিকল্প বরই’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খেজুরের চেয়ে বরইতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলোও বরইতে খেজুরের তুলনায় কম।’

ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রোজা থেকে সারাদিন পানি পান না করার কারণে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেহে গ্লুকোজ শর্ট হয়ে যায়। এটি পূরণে চিনির শরবতের চেয়ে অনেক ভালো খেজুর খাওয়া। কারণ, খেজুরে কোনো ফ্যাট নেই। সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি খেজুর খেয়েই পূরণ করা সম্ভব। এমনকি এটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বরইয়ে উপকারী নিউট্রিয়েন্ট থাকে। তবে তা খেজুরের বিকল্প কখনোই হতে পারে না।’

এদিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খেজুর নিয়ে নানা গুরুত্বের কথা বলছেন ইসলামিক চিন্তাবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ইসলামের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুর খেতেন। তার খেজুরের প্রতি বেশি আকর্ষণের ফলে এটা ওই সময় বরকতের বিষয় হিসেবে গণ্য হতো। কালের ধারাবাহিকতায় এখনও এটা প্রচলিত রয়েছে। এটা রাসুলের সঙ্গে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসার একটা সম্পর্ক।’

তিনি বলেন, রমজানের ইফতারিতে খেজুর মানুষের মনের আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যদি সেটা সুলভ হয় তাহলে মানুষের চাহিদাটা মেটে। কিন্তু বাজারদরের ব্যাপারটা মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে মানুষ অস্বস্তিবোধ করে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম খেজুরের বিকল্প হিসেবে বরই খাওয়ার বক্তব্য নিয়ে বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল নন বলেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে আহত করছেন। অথচ খাদ্যসামগ্রীর দাম মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখার যে দায়িত্ব, সেটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

অধ্যাপক ইব্রাহিমের মতো আরও অনেকেই বলছেন, বাধ্যতামূলক না হলেও খেজুর ছাড়া রোজার ইফতারি অনেকটা অসম্পূর্ণ মনে হয়।

সূত্র : বিবিসি


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন