ভূমিকম্প যেভাবে এ যুগলকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাল!

  16-02-2024 02:15PM



পিএনএস ডেস্ক: গত বছর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার কিছু সময় পরই সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলেও ভূমিকম্প আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পে দুই দেশের ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়।

এ ভূমিকম্পে বেঁচে যান আহমদ এবং আন্না। তারা এখন একে অপরকে বিয়ে করছেন। ভূমিকম্পের দিন ৩০ বছর বয়সী আহমদ নাশিদ এবং ২৩ বছর বয়সী আন্না রুদনিচেঙ্কো গভীর ঘুমে আছন্ন ছিলেন। ভূমিকম্পের আঘাতে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।

এই দম্পতিদের একজন সিরিয়া এবং অন্যজন ইউক্রেন থেকে এসেছেন। ভূমিকম্প আঘাত হানলেও শুরুতে তারা ধারণা করেছেন হয়ত বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। কারণ এ ঘটনা সম্পর্কে তারা অভ্যস্ত ছিল। পরে তারা বুঝতে পারল এটা বিমান হামলা নয়, ভূমিকম্প।

তুরস্কের গাজিয়ানতেপে তাদের বসতি। বিয়ের পর তারা প্রথম ভালোবাসা দিবস উপযাপন করছে। আন্না রুদনিচেঙ্কো আল জাজিরাকে বলেন, তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২০২১ সালে আমি আমার প্রদেশ ইউক্রেনের জাপরজিয়ায় চলে যেতে চেয়েছি। ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য আমি এ সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু তুরস্কের প্রতি ভালোবাসার কারণে আমি এখানে থেকে যাই।

তুরস্কে থাকার জন্য সে গাজিয়ানতেপকে বেছে নেয়। কারণ এখানে রন্ধন শিল্পে পার্ট টাইম জব পাওয়া সহজ। সে হোটেল ম্যানেজমেন্টে চাকরি পাওয়ার জন্য ইংরেজি শিখতে শুরু করেন।

অন্যদিকে ২০১২ সালে সিরিয়াতে সংঘাত শুরু হলে আলেপ্প থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্কে আসেন আহমদ ও তার বোন। তাদের বাবা-মা তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তুরস্কে পাঠিয়ে দেন। সেও গাজিয়ানতেপে থাকতে শুরু করেন।

এরপর থেকে আহমদ নাশিদ তুরস্কে সিরিয়ান মানবিক সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন এবং নিজেকে একজন ইলেকট্রনিক মিউজিশিয়ান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি সিরিয়ান এবং তুর্কি ডিজেদের দিয়ে গাজিয়ানতেপের রাতগুলো আনন্দে পার করার চেষ্টা করতেন।

কিন্তু গাজিয়ানতেপে নাইটক্লাবের অভাবে নাশিদের চেষ্টা তেমন কাজে আসেনি। পরবর্তীতে সে অন্য একটি কাজে যোগ দেয়।

একদিন রাতে নাশিদ এবং আন্না সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে সাক্ষাত হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এদিকে আন্না কখনও সিরিয়ান শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। কিন্তু যখন সে নাশিদের গল্প শুনল তখন সে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল। তবে আন্না ভাবতে পারেনি যে সেও শরণার্থী হয়ে উঠবেন।

যখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় হয় তখন আন্না খুবই ভেঙে পড়লেন। এ সময় তার পাশে দাঁড়ান নাশিদ।

নাশিদ বলেন, তুরস্কে সিরিয়ান শরণার্থীদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এজন্য আমি আমার পরিচয় লুকিয়ে রাখি। আরবিতেও কথা বলা বন্ধ করে দেই।

তুরস্কে প্রায় ৩০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী রয়েছে। কিন্তু তুরস্কের নির্বাচনের পর সিরিয়ান শরণার্থীদের প্রতি বিদ্বেষ আরও বেড়েছে। কারণ নির্বাচনে সিরিয়ান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়।

পরিস্থিতি পাল্টে গেল ২০২২ সালে। তখন ইউক্রেন থেকে বহু শরণার্থী তুরস্কে প্রবেশ করে এবং তুরস্কের মানুষজন তাদেরকে সাদর আমন্ত্রণে গ্রহণ করে। সেই সুযোগে আহমদ নাশিদ নিজেকে একজন ইউক্রেনীয় হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।

সব প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে তারা একে অপরকে বিয়ে করেছেন। এ বছর তারা গাজিয়ানতেপে ভালোবাসা দিবস উৎযাপন করছে।

সূত্র: আল জাজিরা


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন