পিএনএস ডেস্ক : কোরবানির ঈদের আর কদিন বাকি। পশুর হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ইজারাদাররা। তবে এখনো হাটে গরু আমদানি পুরোপুরি জমে ওঠেনি। প্রস্তুতিও শেষে পর্যায়ে এখন গরু আসার অপেক্ষায়। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন হাট পরিদর্শন করে দেখা যায়, মূল হাটের অনেক অংশই এখনো ফাঁকা। ঈদ সামনে রেখে হাটের বর্ধিত অংশের অনেক স্থানে চলছে খুঁটি বসানো ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় এবার ১৭টি স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুর হাট। আগামী ৬ জুলাই থেকে দার খুলবে এসব হাটের। বেচাবিক্রি চলবে পাঁচদিন। ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে হাটের প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে হাটের প্রবেশপথে ক্রেতাদের আকর্ষণে বড় করে লেখা ‘গরু-ছাগলের হাট’সহ গেট, মূল মঞ্চ (হাসিল ঘর), প্যান্ডেল, তোরণসহ মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটি বসানোর কাজ শেষ। অনেকেই আবার সময় নিয়ে সাজাচ্ছেন হাট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কবলে পড়া পশুগুলোকে রাখতে আগেভাগেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পশুর হাট। আর গত বছরগুলোয় হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা মাথায় রেখেই এবার আগে থেকেই তারা সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন।
শনিবার (২৫ জুন) রাজধানীর অস্থায়ী পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা,দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা হাটসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা হাটে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি বাঁশের খুঁটি গাড়া শেষ,মোবাইল টাওয়ার,মঞ্চ সাজানোও শেষ। সেখানে কাজ করছিলেন দুলাল আহমেদ তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কাজ করছি। আপাতত শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজও তারাতারি শেষ হবে। এখন গরুর অপেক্ষায় আছি। গরু আসা শুরু করলে বাকি টুকি টাকি যে কাজ আছে সেগুলো করা হবে।
একই চিত্র দেখা মিলেছে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা পশুর হাটে গিয়েও। গরু বাঁধার জন্য সারি সারি বাঁশের খুটি গাড়া শেষ মঞ্চ এর কাজও শেষের পথে। সেখনে কাজ করছিলেন সাজু। তিনি আমাদের এই হাটের কাজ প্রায় শেষ হালকা কিছু কাজ আছে দু একদিনের মধ্যে শেষ হবে।
এবার ডিএসসিসির অধীনে ১০টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা।
এছাড়া ডিএনসিসির অধীনে সাতটি হাটের মধ্যে রয়েছে- ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাট, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তরদিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা এবং ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল-যমুনা হাউজিং কোম্পানির খালি জায়গা।
এসব অস্থায়ী হাট ছাড়াও গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বিক্রি হবে।
এদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে- চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী ১০ জুলাই দেশে ঈদুল আজহা হতে পারে। ফলে ঈদে কোরবানিকে ঘিরে ঢাকার দু সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকছে মোট ১৭টি হাট। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে সাতটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় বসবে ১০টি। হাটগুলোতে বেচাবিক্রি চলবে ঈদের আগের চারদিন এবং ঈদের দিন। সবমিলিয়ে মোট পাঁচদিন পশু বিক্রি চলবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানির হাটের জন্য গবাদিপশুর সরবরাহের সংখ্যা দুই লাখের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
গতবারের মতো এবারও বেসরকারি উদ্যোক্তার পাশাপাশি সরকারিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারিভাবে অনলাইনে ক্রয়কৃত গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা এ বছর সংযোজন করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়নি।
কোরবানির হাটের বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ–সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়।
সভায় বলা হয়, সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে সম্প্রতি বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে গবাদিপশু কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে গবাদিপশুর খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কোরবানির সময় যাতে ওই অঞ্চলে অন্য অঞ্চল থেকে পশু যেতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় আরও বলা হয়, এ ছাড়া এবার সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশু পরিবহনকারী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হবে এবং হটলাইন ১৬৩৫৮ চালু থাকবে। পশু পরিবহনে খামারিদের সমস্যা সমাধানে এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ কাজ করবে। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে কোনোরকম সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পিএনএস/এমবিবি
পশুর অপেক্ষায় কোরবানির হাট
26-06-2022 07:43PM