নির্বাচনে যুব মহিলা লীগ নেত্রী, আলোচনায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বাড়ি

  20-04-2024 10:53AM



পিএনএস ডেস্ক: উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগমুহূর্তে সাড়ে তিন কোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়ি বাবাকে দান করেছেন মাদারীপুরের যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন। গত ৯ এপ্রিল মাদারীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে হেবা ঘোষণার মাধ্যমে এ জমি দান করা হয়।

ফারজানা নাজনীন মাদারীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করে যাচাই-বাছাইয়ে টিকেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক তিনতলা বাড়ি। যা নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।

মাদারীপুর পৌরসভার ১১১নং শকুনী মৌজার ৩৮৭, ৩৮৮ ও ২৮৯নং দাগে ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়েছে বিলাসবহুল এ বাড়িটি। এই সম্পত্তির মালিক ফারজানা নাজনীন ও তার মেয়ে তাসনিম জাহান মীম। ফারজানা নাজনীন তার বাবা কুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নামে গত ৯ এপ্রিল ২৩৩৭নং দলিলে ‘হেবা ঘোষণার’ মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করেন। পরে দাখিল করেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র। নির্বাচনের হলফনামায় সম্পত্তি কম দেখাতেই বাবার নামে লিখে দেন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।

মাদারীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ ভূমি জরিপ বিআরএস রেকর্ডে সংশ্লিষ্ট দাগ ও খতিয়ানে ডোবা থাকায় ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুমোদন চাইলেও সর্বশেষ পৌরসভার সার্ভেয়ার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষজ্ঞরা দেননি কোনো অনুমোদন। পরে ফারজানা নাজনীন ক্ষমতার অপব্যবহার করেই এই ভবন নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীনের নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের হলফনামায় তিনি ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন তিন লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থ সাড়ে ৪ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন।

মাদারীপুরের যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার ইতালি থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, সেই টাকা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এই বাড়ি। এছাড়া আমি জেলার একমাত্র নারী ঠিকাদার, আমি ব্যবসা করি। আমার ব্যবসার টাকায় বাডিটি নির্মাণ করা হয়েছে।

পৌরসভা থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু পৌরসভা অনুমোদন দেয়নি। পরে অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করেছি। এই শহরের অনেক বাড়িই অনুমোদন ছাড়া তৈরি হয়েছে। সবাই যেভাবে বাড়ি নির্মাণ করছে আমিও সেভাবেই বাড়ি নির্মাণ করেছি।

সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই বাড়ির মালিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় বাবার নামে লিখে দেওয়া হয়েছে। জমিটা মূলত বাবার, কিন্তু বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি।

মাদারীপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার এনায়েত হোসেন বলেন, ফারজানা নাজনীন ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জায়গাটি ডোবা। বিআরএস রেকর্ডে ডোবা থাকায় পৌরসভা এজন্য কোনো অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু বাড়িটি তারা অনুমোদন না নিয়েই নিজেদের মতো করেই তৈরি করেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুরের উপপরিচালক আতিক রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়ি নির্মাণের অর্থ জোগানের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন