এক রাতেই ৫০ লাখ ডিম বেচা-কেনা!

  24-10-2016 01:13PM

পিএনএস ডেস্ক: ডিমের উপকারিতার কথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। বাসায় নাস্তার টেবিল, হোটেল কিংবা রেস্তোঁরায় ডিম হয়ে উঠেছে নাস্তার প্রিয় অনুষঙ্গ। সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে ডিমের চাহিদা। মহল্লার মুদির দোকান কিংবা স্থানীয় বাজারে অনেকটাই সহজলভ্য এটি। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে কোথা থেকে আসে এতো ডিমের যোগান?

সে তথ্য জানতেই তেজগাঁওয়ের স্টেশন রোড এলাকায় মধ্যরাতে গমন। সেখানেই যে দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত। প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ ডিম বেচা-কেনা হয় এখানে। ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানতউল্লাহর দেয়া তখ্য মতে, তেজগাঁওয়ের এ আড়তে ট্রাক ড্রাইভার, শ্রমিক-কর্মচারী ও ব্যবসায়ী মিলে প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। প্রতি রাতে বেচা-কেনা হয় প্রায় ৫০ লাখ ডিম। ঈদের সময় বাদে সারা বছরই থাকে কেনা-বেচার একই রকম ব্যস্ততা।

দিনের বেলায় এখানটায় শুনশান নীরবতা। মধ্যরাত হলেই সরব হয়ে ওঠে ডিমের আড়ত। রাত ১২ থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দ্রুত গতিতে চলে ডিম বেচা-কেনার কারবার। আমানতউল্লাহ আড়তে এসেছেন রাত ১২টার পর। ফজরের নামাজ আদায় করে কর্মস্থল থেকে বিদায় নেবেন তিনি। ১৪ বছর ধরে আছেন সমিতির সঙ্গে। প্রথম আট বছর ছিলেন সেক্রেটারি। ছয় বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

গাজীপুরের অ্যাডভোকেট বন্ধুর পরামর্শে ডিম ব্যবসার শুরু তার। সেই থেকে পার করেছেন এক যুগেরও বেশি সময়। ডিম ব্যবসা শুরু করার আগে জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর থেকেছেন কুয়েত ও সৌদি আরবে। ব্যক্তিগত বিষয়ে আলাপ আর না বাড়িয়ে বলতে লাগলেন ডিমের কারবার প্রসঙ্গে, ‘সবচেয়ে বেশি ডিম আসে গাজীপুর, মাওনা, শ্রীপুর নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের খামার থেকে। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ৫০ থেকে ৬০টা ট্রাক। কোনোটিতে ডিম ধরে ৮২ হাজার তিন’শ ২০টি, কোনোটিতে ৮৮ হাজার দুই’শ।’ ডিম ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ডিম ভেঙ্গে যাওয়া কিংবা অনাকাঙ্খিত কোনো সড়ক দুর্ঘটনা।

এ ব্যাপারে আমানতউল্লাহ বলেন, ‘ডিম ভেঙ্গে গেলে মালিককেই তা বহন করতে হয়। কখনো কখনো সড়ক দুর্ঘটনায় ডিম নষ্ট হয়। ট্রাক উল্টে ডিম ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে মাঝেমধ্যেই। তখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে।’ আজ প্রতিটি ডিমের পাইকারি মূল্য ৬.৭০ টাকা। তবে যোগানের উপর নির্ভর করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ে-কমে। বেচা-কেনা হয় নগদ টাকায়। ডিম প্রতি এক পয়সা হ্রাস-বৃদ্ধি বড় পার্থক্য গড়ে দেয় মুনাফায়।

এ ব্যাপারে আমানতউল্লাহ জানান, লাভের হিসেবটা এখানে পয়সার হিসেবে। এক পয়সা কম-বেশি হওয়া মানে অনেক কিছু। এখানে রয়েছে ৮৬টি আড়ত। আড়তের কর্মচারীরা সবাই বেতনভুক্ত। একেকজন কর্মচারীর পেছনে থাকা-খাওয়া ও বেতন বাবদ মাসে ব্যয় ১৫ হাজার টাকা।’

রাজধানীর নবাবগঞ্জ থেকে আড়তে ডিম কিনতে এসেছেন আল আমিন নামের এক যুবক। এক ভ্যানে ৬ হাজার ২০০ পিস ডিম নিয়ে যাত্রা করছেন নবাবগঞ্জের উদ্দেশে। প্রতি রাতে এমন শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভ্যান ভড়ে ডিম নিয়ে যায় ভিন্ন ভিন্ন এলাকায়। এই আড়ত থেকে ডিম নিয়েই রাজধানীর কোটি মানুষের চাহিদার যোগান দেন আল আমিনদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর মূলে কাজ করে যান আড়তদাররা।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন