মরুভূমির খেজুর জন্মাবে পাহাড়ের টিলায়, সাফল্যের দুয়ারে কৃষি উদ্যোক্তা নুরুল

  04-08-2023 06:44PM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়িতে মরুভূমির খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন মো. নুরুল আলম নামের এক কৃষক। পাহাড়ি জনপদে চাষ হওয়া এই খেজুরের আকার ও স্বাদ মরুভূমির খেজুরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রসুলপুর গ্রামের গভীর অরণ্য ভেদ করে বিশালাকার টিলা ভূমিতে স্বপ্নের খেজুর চাষ শুরু করেন নুরুল আলম। খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করার তিন বছরের মাথায় ২০২২ সালে খেজুর চাষে প্রথম সফলতা পান এই কৃষক। দেশের মাটিতেই মরুভূমির খেজুরের স্বাদ গ্রহণ করেন তিনি। প্রথম বছরেই লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করে স্বপ্নের ভিতকে মজবুত করেন এই স্বপ্নবাজ । চলতি বছর দুই লাখ টাকারও বেশি খেজুর বিক্রির আশা করেন তিনি।

রসুলপুর এলাকায় নুরুল আলমের স্বপ্নে ঘেরা খেজুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরুভূমির হলদে-সবুজ আর লালচে রঙয়ের খেজুর। প্যাকেটে মোড়ানো খেজুর দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির খেজুর চাষের খবরে তার বাগানে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘদিন আইটি সেক্টরে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কাজ করা নুরুল আলমের বাড়ি ঢাকার শ্যামলীতে। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। আত্মীয়তার সম্পর্কের সূত্র ধরে পাহাড়ে বেড়াতে এসে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান।

নুরুল আলম বলেন, কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই কৃষি সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সে আগ্রহ থেকেই ২০১৯ সালের দিকে সবুজ পাহাড়ের ১৩ একর টিলা ভূমি ক্রয় করি। এরপরই স্বপ্নের কৃষি খামার গড়ে তুলতে শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, ‘শতভাগ আমদানি নির্ভর খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের মানুষের খেজুরের চাহিদা পূরণ করাই আমার লক্ষ্য। শিক্ষিত যুবকদের কৃষি সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। আমদানি নির্ভর ফলের চাষ করতে পারলে দেশের অর্থ বাঁচবে। যেসব কৃষি ফল হারভেস্ট করার পরও এক মাসের অধিক সংরক্ষণ করা যায় সেসব ফলের চাষ করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা কম।’

নুরুল আলমের তিন বছর বয়সী কৃষি খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় শ্রমিকদের। এখানে গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাগানের পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে তার খামারে সাড়ে ৬ হাজার ওয়াটের সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছেন। যা দিয়ে তার বাগানে পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে।

আইটি সেক্টরে কাজ করা নুরুল আলম ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরব ও ইংল্যান্ড থেকে ১০০টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ের পরিত্যাক্ত টিলা ভূমিতে খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ২৪টি গাছে ফলন দেয়। বাগানে বারোহি, আজওয়া, মিটজল ও আম্বার জাতের খেজুরের জাত রয়েছে তাতে প্রায় অর্ধেক গাছেই ইতোমধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে। আগামী দেড় দুই বছরে মধ্যে বাকি সব গাছে ফল ধরতে শুরু করবে। এ বছর প্রায় দুই লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করা হলেও আগামীতে ফলন ভালো হওয়া সাপেক্ষে বিক্রি আরও বেশি হবে বলে আশা করেন নুরুল আলম।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া সৌদি আরবের খেজুর চাষের অনুকূল। এ খেজুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় নুরুল আলম নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা সৌদি খেজুর চাষ করেছেন। মাটিরাঙ্গার রসুলপুরের খেজুর বাগান পরিদর্শন করে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার বাগান দেখে মনে হচ্ছে এখানে খেজুর চাষ লাভজনক হবে। তবে নতুন যারা খেজুর চাষ করবেন তাদেরকে কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে খেজুর চাষ করার পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

পিএনএস/আল আমিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন