৫৮ টাকার আলু বীজ ১ টাকা কেজি দরে বিক্রি

  30-01-2017 02:20AM

পিএনএস ডেস্ক: নীলফামারীতে দেবীগজ্ঞ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে যথা সময়ে আলু বীজ বিক্রি করতে না পারায় ৫৮ টাকা মূল্যের আলু বীজ মাত্র এক টাকা ১০ পয়সা কেজি দরে একশত ২০ মেট্রিক টন আলুর বীজ বিক্রি করা হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিচালক পরিকল্পনা (বিএনআর) জয়দেবপুর গাজিপুর সোহেব হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম তদন্ত করছে।
দেবীগজ্ঞ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কার্ডিনাল জাতের আলু বীজ ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রয়ের স্বাভাবিক দর ছিল। এ দামে আলু বীজ বিক্রয় না হলে গত বছরের ৫ ডিসেম্বরে ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। এ দামেও বীজগুলো বিক্রয় না হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বরে ২৫ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কর্মকর্তাদের অবহেলায় ২৫ টাকা দামেও আলু বীজগুলো বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি।
একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক আলু চাষী ১৪ টাকা কেজি দরে প্রজনন কেন্দ্রে রক্ষিত একশত ২০ মেট্রিকটন আলু বীজ ক্রয়ের প্রস্তাব দিলে কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা বীজগুলো বিক্রয়ে রাজি হয়। এজন্য গত ১৫ ডিসেম্বর ওই কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিস কুমার সাহাকে রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রধান করে আট সদস্য বিশিষ্ট একটি বিক্রয় কমিটি গঠন করা হয়।
তবে বীজ বিক্রয় কমিটির প্রধান ও কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিস কুমার সাহা উক্ত রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করায় আলু বীজগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
প্রজনন কেন্দ্র এলাকার কৃষক ইবরাহিম হোসেন (৪৩) ও সিরাজুল (৩৮) জানান, আমরা প্রতি বছর এখান থেকে আলু বীজ ক্রয় করে আলু চাষ করি। এবারে বীজ ক্রয়ের আবেদন করলে আমাদের জানানো হয় যে, বিক্রয়ের জন্য কোন বীজ নেই। সব বীজ শেষ হয়ে গেছে। তখন আমরা বিভিন্ন দোকান থেকে নিম্নমানের আলুর বীজ ক্রয় করি। আবার অনেকে বীজের অভাবে অন্য ফসল চাষ করে।
তারা আরো জানায়, এখন এই কেন্দ্রের চারিদিকে শুধুই পঁচা আলুর গন্ধ। এখন শুনছি পঁচা আলুর বীজগুলো নাকি এক টাকায় গরুর খাবারের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ বলে তারা উক্তিটি করেন।
দেবীগজ্ঞ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আলু বীজ বিক্রয় কমিটির প্রধান ড. আশিষ কুমার সাহা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী না হওয়ায় আমি উক্ত রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিনি।
দেবীগজ্ঞ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, গত বছর দেড়শত একর জমিতে আলু চাষ করা হয়। এবার আর্থিক সংকটে ৩০ একর কম জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। বীজগুলো বিক্রি হলে কিছুটা আর্থিক সংকট কাটানো যেত বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কয়েক ধাপে দাম কমানোর পরও আলু বীজগুলো বিক্রয় না হওয়ায় আমরা অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। এমন সময় পঁচে যাওয়ার উপক্রম হওয়া একশত ২০ মেট্রিক টন আলু বীজ ১৪ টাকা কেজি দরে সাইফুল নামে এক ব্যক্তি কিনতে চাইলে আমরা আলোচনা করে তা বিক্রয়ের সিন্ধান্ত নিই। কিন্তু বিক্রয় কমিটির প্রধান পিএসও আশিষ সাহা রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে নাই এবং তার লোকজন বাঁধা দেওয়ায় আলুর বীজগুলো আর বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আলু উত্তোলন করা হবে। আলু বীজগুলো না সরালে নতুন আলু সংরক্ষণ করার জায়গা থাকবে না। এখন বীজগুলোর প্রায় পঁচে যাওয়ার অবস্থা। ওই বীজগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আমরা মাত্র এক টাকা ১০ পয়সা দরে এক শত ২০ মেট্রিক টন পঁচা আলুর বীজ এক গরুর খামারীর কাছে বিক্রয় করেছি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন