বগুড়ায় বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনিশ্চয়তা

  01-06-2017 10:14PM

পিএনএস, বগুড়া প্রতিনিধি : সংগ্রহ মুল্যের চেয়ে বাজার মুল্য বেশি হওয়ায় বগুড়ায় এবছর বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জেলার লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার ৮০৮ মেট্রিক টনের বিপরিতে ১৪ হাজার ৪২১ মে. টন চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন মিলাররা। এক হাজার ৯৩৫ জন মিলারের মধ্যে চুক্তি করেছেন ৫২৪ জন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫০০ মে. টন চাল।

বগুড়া খাদ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রতিকেজি বোরো সিদ্ধ চাল ৩৪ টাকা ও আতপ চাল ৩৩ টাকা দরে বগুড়ায় ৬৮ হাজার ৮০৮ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ২ মে থেকে এই সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হবে ৩১ আগস্ট। গত ২০ মে পর্যন্ত খাদ্য বিভাগের সঙ্গে মিলারদের (চালকল মালিক) চাল সরবরাহের চুক্তির সময় সীমা থাকলেও কমসংখ্যক মিলার চুক্তি করায় পরে ৩১ মে পর্যন্ত চুক্তির সময় বাড়ানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদনের অন্যতম জেলা বগুড়ার বাজারে নতুন চাল উঠলেও দাম কমেনি। ৩৭-৩৮ টাকা কেজির নিচে মোটা চাল নেই।

একারনে শুরু থেকে চাল কল মালিকদের চাল সরবরাহে আগ্রহ ছিলনা। প্রথম দফা মেয়াদে গুটি কয়েকজন চুক্তি করেন। পরবর্তিতে ৩১ মে পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোয় আরও কিছু মিলার চুক্তি করেন। বগুড়ার খাদ্য কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, সরকারের ক্রয়মুল্যের চেয়ে বাজার মুল্য কিছুটা বেশি থাকার কারনে এবছর চাল সরবরাহে মিলারদের আগ্রহ কম দেখা গেছে। তবুও শেষ সময় পর্যন্ত (৩১ মে) বগুড়ার ১২ উপজেলার খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত এক হাজার ৯৩৫ জন মিলারের মধ্যে ৫২৪ জন মিলার চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন।

এই চুক্তিবদ্ধ মিলাররা ১৪ হাজার ৪২১ টন চাল সরবরাহ করবেন। আর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৮০৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সিদ্ধ চাল ৬২ হাজার ৪২৯ মে.টন এবং আতপ চাল ৬ হাজার ৩৭৯ মে.টন। ইতোমধ্যে মিলাররা ৫০০ টন চাল গুদামে সরবরাহ করেছেন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৯৮৯ মে. টন, শাজাহানপুরে ২ হাজার ৬৬৫ মে. টন, শিবগঞ্জে ২ হাজার ৩৩৬ মে. টন, সোনাতলায় ২ হাজার ২৩৯ মে. টন, গাবতলীতে ২ হাজার ৪৭৫ মে. টন, সারিয়াকান্দিতে ১ হাজার ৫১৭ মে. টন, ধুনটে ৯৮৯ মে. টন, শেরপুরে ১৩ হাজার ৭৯৩ মে. টন, নন্দীগ্রামে ১ হাজার ৪৫৪ মে. টন, কাহালুতে ৩ হাজার ৭৬৮ মে. টন, দুপচাঁচিয়ায় ১৭ হাজার ৩৯৫ মে. টন এবং আদমদিঘী উপজেলায় ৯ হাজার ৮০৯ মে. টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার টন চাল। সেখানে ৫৬ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়। আমনেও উদ্বৃত্ত চাল সংগ্রহ করা হয়েছিল গত মৌসুমে। বগুড়ার চালকল মালিক মো. ফরিদ উদ্দিন সরকার বলেন, বগুড়ার উৎপাদিত ৩৬-৩৭ টাকা কেজি দরের মোটা চাল যাচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রামের দিকে। আর বিআর ২৮ চাল (চিকন) বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা কেজি দরে। বাজারে নতুন চাল উঠলেও দাম কমছে না। যে কারনে খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ মুল্যের চেয়ে বাজার মুল্য বেশি হওয়ায় এবছর চুক্তি করেছেন কম সংখ্যক মিলার।

বগুড়া জেলা অটো অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক বলেছেন, ৩৭-৩৮ টাকার নিচে বাজারে মোটা চাল নেই। আর সরকারি সংগ্রহ মুল্য প্রতিকেজি ৩৪ টাকা। তবুও সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। আগ্রহী মিলারদের চাল সরবরাহে চুক্তির জন্য বলা হয়েছে। এরমধ্যে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তখন চুক্তিবদ্ধ মিলারদের পুনঃ বরাদ্দের মাধ্যমে আরো চাল সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি মনে করেন। জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ধান পুরোপুরি কাটা হলে এবং সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করলে বাজারে চালের দাম কিছুটা কমে আসবে। সে সময়ে বোরো চাল সংগ্রহ বেগমবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন