নরসিংদীতে লটকনে ভাগ্যবদল

  25-07-2017 11:00PM

পিএনএস ডেস্ক:নরসিংদীর পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলোতে এখন শুধু সোনালী লটকনের সমারোহ। এক সময়ের বনজ ফল হিসেবে পরিচিতি থাকলেও বর্তমানে লটকন লোভনীয় ফল হয়ে দেশে-বিদেশে বৃহৎ বাজার অর্জন করেছে। ভাগ্য বদলেছে অসংখ্য বেকার যুবক-কৃষকের।

কৃষি জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় চাষাবাদ হওয়া সুস্বাদু লটকন এখন দেশর সীমানা পেড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। দেশ-বিদেশের বাজারগুলোতে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপকহারে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লটকন ফল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে দাবি করছে লটকন আবাদকারী কৃষকরা। কম খরচ আর অল্প পরিশ্রমে ফলন ও মূল্য দু’টোই ভালো হওয়ায় লটকন এখন চাষিদের কাছে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক ফল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিদেশ ফেরত বহু বেকার যুবকও লটকনের চাষ করে তাদের মুখে ফুটিয়েছে অর্থনৈতিক সাফল্যের হাসি।

প্রতি মৌসুমে এখানকার লটকন চাষিরা প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার মেট্রিকটন লটকন উৎপাদন করছে। নরসিংদীর উৎপাদিত লটকন দেশে-বিদেশে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বাজার মূল্য ধরে রেখেছে বলে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানিয়েছেন।

এই বছর জেলায় ১৩৪২ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী লটকন চাষ হয়েছে শিবপুরে।

প্রতিবছর এখানকার কৃষকরা লটকন বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। প্রতি কেজি লটকন স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা প্রবাসীদের দেশজ ফলের চাহিদাও মিটাচ্ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে লটকনের মৌসুমকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বৃহৎ লটকনের বাজার। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজারটি বসে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী রায়পুরার মরজারে। কামারটেক, চৈতন্য, জয়মঙ্গল, রায়পুরা ও বেলাবরের বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হচ্ছে।

বেলাব উপজেলার কৃষক আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, দিনে দিনে আমাদের এলাকায় লটকনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাপারীরা এখন লটকন কিনে বিদেশও পাঠাচ্ছে। তাতে আমরা এখন অন্য ফসলের তুলনায় লটকন চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছি। একই সাথে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে।

লটকন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নরসিংদির বাজারগুলোতে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা এবং বাগান থেকেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, লটকনে ওষধি গুনাগুণ রয়েছে অনেক। এর মধ্যে ডায়াবেটিক ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণসহ রুচি বর্ধক ফল হিসেবে প্রচার পাওয়ায় সর্বস্তরে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর লটকন আবাদ করে স্বাবলম্বী নরসিংদীর শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার অনেক কৃষক। এরই মধ্যে এলাকার মানুষের কাছে লটকন এখন অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ এলাকার মাটি লটকন চাষের খুবই উপযোগী। এক সময় জংলি ফল হিসেবে পরিচিত ছিল লটকন। সময়ের বিবর্তনে লটকন এখন পুষ্টি গুনে ভরপুর সুস্বাদু একটি ফল। আধুনিক বিজ্ঞান মতে লটকনে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি রয়েছে। পাশাপাশি প্রচুর ক্যালোরি ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ থাকায় ভোক্তাদের কাছে দিন দিন বাড়ছে এ ফলের কদর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. লতিফ হোসেন জানান, লটকন দৃষ্টিনন্দন ও ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। নরসিংদীর শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার চাষি আর বেকার যুবকদের কাছে এটি একটি অর্থকড়ি ফল। তেমন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই উৎপাদিত হয় এই ফল। অত্যন্ত মিষ্টি আর পুষ্টিসমৃদ্ধ এখানকার লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তাই কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আর আমরা কৃষি অধিদপ্তর গবেষণা করছি কিভাবে এর ফলন আরো বৃদ্ধি করা যায়।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন