শেরপুরে আমনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে বাজার অস্থিতিশীল

  02-12-2020 04:00PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে হঠাৎ করেই ধান-চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত দুইদিনের ব্যবধানে প্রতিবস্তা চালে (৯৫কেজি) ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম না কমলেও প্রতি মণ ধানে কমেছে ৫০-৬০টাকা। আমনের নতুন ধান-চাল সরবরাহ বাড়তে থাকায় বাজার হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। ধান-চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চাতাল উঠলেই চালে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কতদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে-এনিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা। আর কৃষকরা জানান, নানা প্রতিকূলতার কারণে চলতি মৌসুমের আমন ধানের ফলন কম হলেও আশানুরুপ দাম পাওয়ায় তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছিল। তবে প্রতিদিনই ধানের দাম কমছে। স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতি মণে ৫০-৬০টাকা পর্যন্ত কমেছে। এরপরও ধার-দেনা পরিশোধ, রকমারি রবি ফসল চাষ ও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে কমদামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

সরেজমিনে গিয়ে একাধিক ধান-চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ উপজেলায় ২শ' থেকে ৩শ' মণ ধান ধরে এরকম ২৫০-৩০০টি এবং ৫০-৬০ মণহারে ধান শুকানো যায় এরকম ১২৫০-১৩০০টি চাতাল রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে শতাধিক সেমি অটো রাইচ মিল। ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন, আব্দুস সালাম, জামাল মিয়া, গোলাম রব্বানী জানান, প্রতিটি বড় চাতালের বিপরীতে ১৪জন ও ছোট চাতলে ৪জন করে শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা জানান, সম্প্রতি ভরা আমন মৌসুমে ধান-চালের দাম কমতির দিকে থাকার কারণে ব্যাপারিরাও চাল কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর স্থানীয়ভাবেও তেমন একটা ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান আমদানি করতে হয়। তাছাড়া একটি চাতাল নিয়মিত চালু রাখতে ৫-৬ চাতাল ধান মজুদের প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু মোকামে চাহিদামত ধান মিললেও চালের বাজার কমতির দিকে থাকায় লোকসানের সর্বোচ্চ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়ও আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে। ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি পথে বসার উপক্রম হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এসব ব্যবসায়ীরা।

সাধুবাড়ী যুমনা সেমি অটো রাইচ মিলের সত্ত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, শেরপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫জাতের ধান ১০১০-১০৩০টাকা, রনজিত ১০৫০-১০৮০টাকা ও বিআর-৪৯জাতের ধান ১১২০-১১৫০টাকা, কাটারিভোগ ১২০০-১৩২০টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিমণ ধান উক্ত পরিমান টাকা দরে ক্রয় করে ঘরে আনতে আরও ২৫-৩০টাকা খরচ পড়ে। এরমধ্যে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয়। এই ধান সিদ্ধ ও শুকানো বাবদ প্রতিমণে ব্যয় হয় ২০-২২টাকা। আর ভাঙাতে আর ২২টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে ওই পরিমান (এক মণ) ধান থেকে বড়জোর ২৮-২৯সের চাল পাওয়া সম্ভব। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ি এই পরিমান চাল বাজারে বিক্রি করলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ি একেকজন ব্যবসায়ীর প্রতিবস্তায় ১৫০-২০০টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানা চাউলকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ জানান, ধানের দাম তুলনামূলক না কমলেও চালের দাম কমছেই। তাই বাজার অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তবে কী-কারণে ভরা আমন মৌসুমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও চালের আড়ৎদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম কমাচ্ছেন বলে দাবি করেন এই মালিক সমিতির নেতা।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন