সবজি চাষে কৌশল পাল্টাচ্ছেন চাষিরা

  20-12-2023 10:06AM



পিএনএস ডেস্ক: পাবনার চাষিরা আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন। আগাম জাতের সবজি চাষ করে পাবনার আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী এলাকার চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাফা বেগুন ও গাজর।

কৃষি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অগ্রসর চাষিরা বুঝেছেন মৌসুমের শুরুতে সবজি বাজারজাত করতে পারলে চড়া দাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে শীত মৌসুমের শুরুতে ফুলকপি, শিম, টমেটো, গাজরের কদর আকাশ ছোঁয়া। জেলার চাষিরা এসব আগাম কৃষি ফসল উৎপাদনে সব সময়ে এক পা এগিয়ে। তাই সবজি চাষ করতে কৌশল পাল্টাচ্ছেন সেখানকার চাষিরা।

বেশকিছু সবজি চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং শিম চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন। আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করতে চারা উৎপাদনের জন্য বর্ষার শেষভাগে ঘরের বারান্দায়, টবে চারা তৈরি করেন। কেউ অতিবর্ষণের হাত থেকে চারা গাছ রক্ষায় পলিথিন ব্যাগ দিয়ে বেড ছেয়ে দেন।

চাষিরা জানান, বাইরে চারা করা না গেলে ঘরেই পলিথিন ব্যাগে চারা করা হয়। আগাম জাতের ফুলকপি চাষের সুবিধা সম্পর্কে চাষিরা জানান, এতে একই জমিতে তিনবার ফুলকপি চাষ করা যায়। প্রথমবার রোপণকৃত কপি গাছে পুষ্পমঞ্জরি সুগঠিত ও পুষ্ট হওয়ার পর বাজারজাত করা হয়।

এদিকে, পুষ্পমঞ্জরি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যাচের চারা পলিথিন ব্যাগে রোপণ করে রাখা হয়। দ্বিতীয় দফায় ফুলকপি উত্তোলনের পর তৃতীয় ব্যাচের চারা রোপণ করা হয়। এভাবে কপি চাষে অল্প জমি থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়। আগাম ফুলকপি চাষিরা এক বিঘা জমি থেকে ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকার কপি বিক্রি করে থাকেন।

এ অঞ্চলের চাষিরা আগাম টমেটো, গাজর ও শিম চাষেও এগিয়ে। ঈশ্বরদী উপজেলার ফরিদপুরগ্রাম, ভাড়ইমারি, সরাইকান্দি এবং আটঘরিয়া উপজেলার রামেশ্বরপুর এলাকার বিশাল বিশাল মাঠজুড়ে যেন শিম সমুদ্র গড়ে উঠেছে। একেক জন কৃষক এক বিঘা, দুই বিঘা, পাঁচ বিঘা, ১০ বিঘা থেকে শুরু করে ৭৫ বিঘা পর্যন্ত শিম চাষ করে থাকেন। যেসব চাষির নিজস্ব জমি নেই তারা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন।

ফরিদপুর গ্রামের জালাল, শাহাব উদ্দিন ও রামেশ্বরপাড়ার মুজিবুর, শামসুল আলম জানান, শ্রাবণ মাসে তারা শিম লাগান আর আশ্বিন-কার্তিক মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ফলন পান। শুরুতে খুবই ভালো দরে শিম বিক্রি করতে পারেন। তাই উচ্চমূল্যে লিজ নেয়ার পরেও তারা লাভের মুখ দেখেন। সব খরচ বাদ দিয়েও বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ থাকে শুধু শিম চাষেই। আগাম শিম এখন এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল। চাষ বেড়ে যাওয়ায় মূলাডুলি বাজারেই গড়ে উঠেছে আড়ৎ। সাম্প্রতিক সময়ে ‘রুপভান’ বা ‘অটোশিম’ নামের আগাম জাতের শিম ঈশ্বরদী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।

ছলিমপুর গ্রামের সুমন পারভেজ ও সেলিম প্রামাণিক জানান, সবজি প্লটে বেশ কয়েকজন চাষির সবজিক্ষেত রয়েছে। তাদের জমি উঁচু হওয়ায় আগাম জাতের সবজি চাষ করতে তাদের সুবিধা হয়। উঁচু জমি হওয়ায় বৃষ্টিতেও মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হয় না। বেলে ও দোআঁশ মাটির কারণে সবজি ভালো হয়। তারা মুলাচাসহ আগাম জাতের সবিজ চাষ করতে পারছেন এবং লাভবান হচ্ছেন।

ছলিমপুর গ্রামের খ্যাতিমান চাষি শাহজাহান আলী বাদশা জানান, আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী এলাকার বহু শিক্ষিত যুবক চাকরি পেছনে না ছুটে আধুনিক পদ্ধতিতে আগাম সবজি চাষ করে এখন স্বনির্ভর ও প্রতিষ্ঠিত। এদের অনেকে আজ বেকার ভবঘুরে যুবক থেকে দেশখ্যাত চাষি হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, সবজি চাষে পাবনার চাষিরা সবসময় অগ্রসর। চাষিরা এখন আগাম জাতের সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন