‘কাগজী লেবু’ বিক্রয় করে লাখ টাকা আয়

  25-07-2016 07:00AM

পিএনএস: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে আসছে। কাগজী লেবু বিক্রয় করে চাষি ও বিক্রেতারা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এ ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু উৎপাদন হয়ে থাকে পটিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে। ১৯৮০-৮১ সালে পটিয়ার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে চাষিরা কাগজী লেবুসহ বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ করে। লেবু সাধারণত ৫ জাতের রয়েছে। এর মধ্যে কাগজী লেবু, পাতি, এলাচি, বাতাবি ও নতুন জাতের হাইব্রিট সিডলেস নামের একটি লেবুর চাষ বর্তমানে হচ্ছে।

১৯৮৫ সালে পটিয়ার খরনা, হাইদগাঁও, কেলিশহর, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুর এলাকা, বোয়ালখালীর করল ডেঙ্গা, জ্যৈষ্টপুরা ও কানুনগো পাহাড়ি এলাকার ব্যাপক পরিমাণে লেবুর চাষ গড়ে উঠে। পটিয়াসহ আশপাশের পাহাড়ি অন্যান্য এলাকার লেবু চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের পটিয়াস্থ চক্রশালা রেলস্টেশনে জমা হতো।

’৮৫ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ১১ বছর যাবৎ চক্রশালা রেলস্টেশনে ১৬নং ডাউন ট্রেন দিয়ে সন্ধ্যায় শত শত টুকরি কাগজী লেবুর চালান চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো। ফলে চক্রশালা রেল স্টেশনে কাগজী লেবুর বুকিং চার্জ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ লেবু খাতে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করতো। তখনকার সময়ে এক টাকা দিয়ে ৪-৫টি লেবু পাওয়া যেতো। যে পরিমাণ লেবু উৎপাদন হতো সে লেবু দিয়ে বেভারেজ কোম্পানি জুস, আচার, জ্যাম, জেলিসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করতো। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গত ১৫-১৬ বছর ধরে লেবু বাগানে ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমণে লেবু বাগানের অনেক গাছ মরে যায়। ফলে দিন দিন পটিয়ার লেবুর উৎপাদন কমতে থাকে।

এতে ব্যাপকহারে লেবু বিক্রি বন্ধসহ বেভারেজ কোম্পানির অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বাগানে নতুন করে কিছু গাছ সৃষ্টির ফলে ইদানীং লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে লেবুর ফুল আসে। আষাঢ়- শ্রাবণে লেবুর ভরা মৌসুম সৃষ্টি হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি কমলমুন্সির হাটে লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। চন্দনাইশ, বোয়ালখালীর দুই তিন স্পটে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়ে থাকে।

এভাবে দুই মাস যাবৎ লেবুর মৌসুম চলে। এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করেন স্থানীয় চাষিরা। আর প্রায় ২০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এ লেবু বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চলিত বর্ষা মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও মহা খুশি। রমজান, ঈদ ও আবহাওয়া গরম থাকার কারণে লেবুর দাম চড়া থাকায় এবার চাষি ও খুচরা বিক্রেতারা ৩-৪ গুণ বেশি দাম পেয়ে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। খরনার লেবু চাষি আবদুল নুর জানান, বাণিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদন ও বিক্রি করার কারণে এ পাহাড়ের গ্রামগুলোকে লেবুর গ্রামও অনেকেই বলে থাকেন। পাহাড়ি ও সমতল উর্বর ভূমি লেবু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের প্রতি অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন।

লেবু চাষিদের অভিযোগ পরিত্যক্ত পাহাড়ি ভূমি যদি লেবু চাষের আওতায় আনা হয় তাহলে উৎপাদিত লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে বিদেশেও রপ্তানি করা যেত। স্থানীয় লেবু চাষিরা আক্ষেপ করে বলেন, লেবু ও সবজি রাখার জন্য হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে অনেক সময় কম দামে এগুলো বিক্রি করতে হয়।

এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ জানান, পটিয়ার ১০ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। দেশের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু উৎপাদন হয় পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু বাগান রোগমুক্ত করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।


পিএনএস/বাকীবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন