বরেন্দ্রে গম চাষে ডলোচুনের ব্যবহার

  12-11-2016 11:34AM

পিএনএস ডেস্ক: অম্লত্বকে দূর করার জন্য জমিতে ‘ডলোচুন’ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ফলন পাওয়া সম্ভব। রাজশাহী অঞ্চলের মাটির প্রকৃতি কিছুটা অম্লীল। ডলোচুন প্রয়োগে সেটি দূর হয়ে যায়। গম চাষে তাই কৃষকদের ডলোচুন প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তবে কৃষি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএডিসি) এখনো প্রদর্শনী পর্যায়ে রয়েছে।

এ জন্য মাটি পরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের মতে, চুন প্রয়োগের আগে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। মাটি অম্ল হলে চুন প্রয়োগে সেটি দূর করা যেতে পারে। এতে গমের ফলন বেড়ে যাবে বহুগুণ। তবে সুষম সার প্রয়োগেও এটি হতে পারে।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ডলোচুন চুন প্রয়োগের আগে চাষিদের মাটি পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর সার সুপারিশমালা দেখে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। এতেই বাড়বে ফলন। এছাড়া কমাতে হবে রাসায়নিক সার নির্ভরতা। একই ফসল এক জমিতে বার বার চাষ থেকে সরে আসতে হবে।

তিনি জানান, গম চাষে ডলোচুন প্রয়োগ এখনো তারা প্রদর্শনী পর্যায়েই রেখেছেন। এতে সাফল্য এসেছে। তবে এটি চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সময় লাগবে। এ নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি দফতরগুলো।

তবে বিএমডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, বরেন্দ্রের সব মাটিই কমবেশি অম্লীল। তাছাড়া মাটি পরীক্ষায় অভ্যস্ত নয় কৃষক। চুন প্রয়োগ করলেই চলবে। এতে ফলন বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে বরেন্দ্রে গম চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে বিএমডিএ। এ নিয়ে কথা হয় সংস্থাটির শস্য উৎপাদনে মানসম্মত বীজ উৎপাদন, সরবরাহ ও কৃষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক এটিএম রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, মাটি পরীক্ষা করে চুন প্রয়োগ করতে পারলে সব চেয়ে ভালো। তবে না করেও বরেন্দ্র এলাকার মাটিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা যায়। পাটি পরীক্ষার পর একর প্রতি ৪০০ কেজি করে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে। না পরীক্ষা করলেও একই মাত্রাই চুন প্রয়োগ করা যাবে। তবে জমি তৈরির দুই সপ্তাহ আগে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মাটির অম্লত্ব বাড়লে ফসফরাস রারের কার্যকারিতা কমে যায়। চুন প্রয়োগ করলে এটি হয় না। নিয়ম মেনে চুন প্রয়োগ করলে উৎপাদন বাড়বে ১৫ থেকে ২০ ভাগ। ডলোচুন প্রয়োগের অন্তত সাত দিন পর বীজ বপন করতে হবে। এ নিয়ে চাষিদের স্থানীয় কৃষি দফতরের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দেন এই কৃষিবিদ।

বিএমডিএর এই কর্মকর্তা জানান, এবছর থেকে তারা বারি গম-২৬ ও বারি গম-২৭ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছেন। পানি সাশ্রয়ী ও উচ্চ ফলনশীল এ জাতের গম চাষে এরই মধ্যে তারা উদ্বুদ্ধ করেছেন চাষিদের। ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতেই এ উদ্যোগ তাদের।

২০ কেজির প্যাকেটে করে বিএমডিএর স্থানীয় দফতর থেকে এ বীজ সংগ্রহ করতে পারবে চাষিরা। এ ক্ষেত্রে প্রতিকেজি ভিত্তি বীজের দাম ৩০ টাকা এবং প্রত্যয়িত মানঘোষিত বীজের দাম ৩২ টাকা ধরা হয়েছে। এর বাইরেও গমবীজ বিতরণ করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে এ বীজ।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে, এ বছর রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৭১৯ হেক্টর। গত বছর গম চাষ হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৩১ হাজার ৬৫০ হেক্টর, নওগাঁয় ২৬ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, নাটোরে ২৫ হাজার ৬০ হেক্টর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ৯০০ হেক্টর।

জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সেচ সবিধা সীমিত হচ্ছে বরেন্দ্রে। এতে ধান চাষ থেকে গমসহ সল্পকালীন বিভিন্ন ফসল চাষে ঝুঁকছে কৃষক।



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন