উত্তরাঞ্চলে বছরে নষ্ট হয় ১০০ কোটি টাকার সবজি

  03-01-2017 09:13AM

পিএনএস ডেস্ক: উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় শুধু সংরক্ষণের অভাবে বছরে প্রায় এক লাখ টন সবজি পচে নষ্ট হচ্ছে। পচে যাওয়া এ সবজির দাম গড়ে ১০ টাকা কেজি ধরলে দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে। কৃষি বিভাগের এক গবেষণা তথ্যে এ চিত্র পাওয়া গেছে। বগুড়ার বাজারগুলোতে দুই মাস আগে থেকেই শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, বরবটি, গাজর, মুলা, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক ও পুঁইশাক। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন সবজির সরবরাহ বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে দাম। তাই শীতের সবজি নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন চাষিরা।

বগুড়া সদরের কাগইল গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ কাঁকরোল চাষি ফরিদ সওদাগর জানান, আগাম সবজি চাষ করে ভালো দাম পেলেও খুশি নন। কারণ মৌসুমে অতিরিক্ত ফলনে তার যে তি হবে সেটা এই বাড়তি দামে পুষিয়ে তোলা যাবে না। বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মহাস্থানগড়। দিনভর পরিশ্রম করে যে চাষিরা এখানে নামমাত্র দামে সবজি বিক্রি করে ঘরে ফিরে যান, তাদের সবার প্রায় একই অভিমত। আর কয়েক দিন পর যখন সব জমির সবজি একসঙ্গে হাটে আসবে, তখন দাম পড়ে যাবে। নামমাত্র দামে বেচতে হবে। এখন থেকে দাম কমানোর সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

কৃষকরা চান, সরকার তাদের উৎপাদিত সবজি ন্যায্য দামে দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করুক। আর এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সবজি সংরণাগার। তাতে কৃষক যেমন পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, তেমনি ভোক্তারাও মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের হাত থেকে রা পেয়ে অনেক কম দামে টাটকা সবজি পাবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে বগুড়া শহরের চেলোপাড়ায় রেলের একটি জায়গায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চালু করা হয়েছিল চাষিবাজার। কৃষকরা সরাসরি সবজি বিক্রি করতে পারত এই বাজারে। দাম পেত ভালো। সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ হয়ে গেছে সেই বাজার।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলে আলু সংরণের জন্য হিমাগার রয়েছে। এখানে অনেকে টমেটো, ডিম কিংবা কপি সংরণ করে। তবে এটা বাস্তবসম্মত নয়। সবজিভেদে হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ভিন্ন সবজির জন্য আলাদা ঘর থাকতে হয়।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আমজাদ হোসেন তাজমা জানান, ২০০১ সালে কাহালু উপজেলার দরগারহাটে মহাসড়কের পাশে সবজি সংরণাগার অ্যাগ্রোফ্রেশ লিমিটেড নির্মাণ করেছিলাম। উত্তরাঞ্চলে এটিই ছিল প্রথম সবজি সংরণাগার। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এই প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষকের অসচেতনতার কারণে প্রকল্পটিকে চালু রাখা যায়নি, যার কারণে কিছুদিনের মধ্যে এটি বন্ধ করে দিতে হয়। এখন স্থানটি পরিত্যক্ত রয়েছে। তিনি আরও জানান, উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর শতকোটি টাকার সবজি পচে নষ্ট হয়। সংরণ করা গেলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হতো।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানান, বেশিরভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে অনাগ্রহী। তাদের সেই সুযোগও নেই। কোনো সংস্থা থেকে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কিনে ঢাকায় এনে বিক্রি করতে পারলে তবে ভোক্তারা কম দামে টাটকা সবজি পাবেন। সবজির উপযুক্ত দাম সারা বছর পেতে হলে সংরণাগার খুব বেশি প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন