দুই মাসেও চালের বস্তায় লেখা হয়নি ধানের জাত

  17-04-2024 12:40PM




পিএনএস ডেস্ক: চালের বস্তায় ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপাদনের তারিখ ও ওজন লিখা হয়নি। ওইসব তথ্য লেখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রায় দুই মাস সময় দেওয়া হলেও তা কার্যকর করেনি তারা। চালকল মালিকরা (মিলার) বস্তায় নির্দেশিত বিষয়গুলো লিখতে আরও সময় চান। তারা চালের বস্তায় এসব লেখা নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

তবে ব্যবসায়ীদের সময় চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, বস্তায় ধানের জাত, মূল্য, চালের পরিমাণ, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপাদনের তারিখ লিখার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছেন। তাদের আবেদনটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, বস্তায় সরকারি নির্দেশিত বিষয়গুলো লিখতে সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি, আশা করছি নতুন বোরো চালের বস্তায় সরকার নির্দেশিত সব লিখা হবে।

মিল মালিকদের সঙ্গে বছরজুড়ে আলাপ-আলোচনার পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি বন্ধের মধ্যেই চালের বস্তায় লিখার জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা সংবলিত পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মিল মালিকরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাদের কিছু যন্ত্রপাতি লাগবে। সেটি সংগ্রহ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এছাড়া বস্তায় ধানের জাত লেখা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ বিষয়টিও সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চালের বস্তায় বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করতে মিল মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়েছে। দু-মাস আগে পরিপত্র জারি করা হয়েছে এরপরও তাদের এ ধরনের অসহযোগিতা রীতিমতো দুঃখজনক। তাদের এ ধরনের গোয়ার্তুমি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করলে জনমনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবেই। আরও চালের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যদি সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে শৈথিল্য দেখানো হয়, তখন সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।

সরকারি নির্দেশনা কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হলেও মিল মালিকরা এখনও কেন প্রস্তুত নয় সে বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৬৪ জেলায় মিল মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকরা মিটিং করেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা মিটিং করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবও মিল মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। তারপরও তারা প্রস্তুত হতে পারেনি, এটা তো ঠিক হতে পারে না। মিল থেকে নতুন কোনো চালের বস্তা বের হলে সে বস্তায় নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। মিল মালিকরা নির্দেশনা মানছেন কিনা- সেটাও আমরা তদারকি করব। কর্মকর্তাদের কথার ভেতর এক ধরনের নমনীয়তা লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বলছেন না তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের সময় দিতে চায়, এটাতো পরিষ্কার। তাদের খেয়াল খুশিতে সরকার খুশি থাকতে চায়। সুতরাং সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে কি করে। ব্যবসায়ীরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের থোরাই কেয়ার করে। বস্তায় ধানের জাত লিখা হলে ব্যবসা কমে যাবে- চাল ব্যবসায়ীদের মনে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত। এটা তাদের ভুল ধারণা মাত্র। বরং তারা যে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে তা অবশ্যই বন্ধ হয়ে যাবে। তারা খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করে সরকারি সিদ্ধান্ত বিতর্কিত করতে চায়।

দেশে এমন কোনো ধান নেই, যে ধান সম্পর্কে কৃষি বিভাগের অজনা। সব ধরনের ধানের জাতের বিষয়ে ধান গবেষকরা অবগত। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নতুন করে বলছেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জানার বাইরেও অনেক জাতের ধান দেশে পাওয়া যায়। তারা কৃষকদের কাছ থেকে ওইসব জাতের ধান কেনেন। সুতরাং সেই সব ধানের চালের বস্তায় কি জাত লিখবে তা জানতে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজারে নতুন চাল আসতে আরও প্রায় ৪৫ দিন লাগবে। কারণ ধান কাটা বা আহরণ এখনও শুরুই হয়নি। এই সময়ের মধ্যে চাল ব্যবসায়ীরা পুরান চাল বিক্রি করবে আগের নিয়মে। নতুন বোরো চালের বস্তায় সরকারি শর্তাদি লিখা হবে। এটাই ব্যবসায়ীদের কৌশল। -যুগান্তর

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন