করোনাভাইরাস: একটি সুখবরের অপেক্ষায় দেশ

  15-05-2020 03:41PM

পিএনএস (ডা. আব্দুন নূর তূষার) : কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি হলো, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যারা সুস্থ হয়ে গেছেন, তাদের শরীর থেকে রক্তরস বা রক্তের জলীয় অংশ -প্লাজমা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে দেয়া। ইটালী, ইউকে, আমেরিকার নিউইয়র্ক, ভারতে এই চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে বলে চিকিৎসকরা বলেছেন।

এটা এখনো কোন প্রমাণিত চিকিৎসা নয় তবে অধিকাংশ ট্রায়ালে রোগীর শরীরে কোন গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নাই। অধিকাংশ ট্রায়ালে রোগীদের উল্লেখ করার মতো উন্নতি হয়েছে বলে বলা হয়েছে। একটি ট্রায়ালে ৪৩% মৃত্যুর হার কমে গেছে বলেও বলা হয়েছে।

প্রথম দিকে সেরে যাওয়া রোগী পাওয়া যায় না বলে প্লাজমা থেরাপি করা সম্ভব হয় না। কারণ, প্লাজমা দেবে কে? কিন্তু ধীরে ধীরে পুরো সেরে গেছেন এমন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে যথেষ্ট ডোনার বা প্লাজমা দাতা পাওয়া যায় ও চিকিৎসাটি দিয়ে ফলাফল গবেষণা করা ও রোগ সারানো দুটোই করা যায়।

সুখের সংবাদ হলো বাংলাদেশে প্লাজমা চিকিৎসা শুরু হয়েছে এবং এই নিয়ে একই সাথে গবেষণাও করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দুজন চিকিৎসক কাশফিয়া ও মামুন এই কাজটি শুরু করেছেন। তাদের তত্ত্বাবধায়ক, বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাজহারুল হক তপন ।

কমিটিতে যারা কাজ করেছেন:

১. প্রফেসর ডা এম এ খান

২. প্রফেসর ডা মাজহারুল হক তপন

৩. প্রফেসর ডা আহমেদুল কবির

৪. প্রফেসর ডা সাইফ উল্লাহ মুন্সী

৫. প্রফেসর ডা মোজাফফর হোসেন

এই প্রটোকল তৈরী করে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে থাকছেন প্রফেসর ডা মাজহারুল হক তপন।

এছাড়াও কো- ইনভেস্টিগেটর হিসেবে থাকছেন:

১. প্রফেসর ডা এম এ খান

২. প্রফেসর ডা আহমেদুল কবির

৩. প্রফেসর ডা সাইফ উল্লাহ মুন্সী

৪. প্রফেসর ডা মো মোজাফফর হোসেন

৫. ডা কাশফিয়া ইসলাম

৬. ডা পঙ্কজ কান্তি দত্ত

৭. ডা মাফরুহা আকতার

৮. ডা এবিএম আল মামুন

কনভালেসেন্ট প্লাজমা অ্যান্টিবডি টাইট্রেশন করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কিওর অ‍্যান্ড স্মাইল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের স্বত্বাধিকারী ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা ক্যামেলিয়া। ডোনার পুল গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)।

একজনের থেকে ৪০০ মিলি প্লাজমা নেওয়া হবে। ২০০ মিলি এক ডোজ। প্রথম দিন ২০০ মিলি দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ এক ঘন্টার মধ্যে পরিসঞ্চালন করতে হবে। প্রয়োজন হলে তৃতীয় দিন আরো এক ডোজ মানে ২০০ মিলি দিতে হতে পারে যদি উপসর্গের উন্নতি না হয়।

আপনাদের মধ্যে যারা সেরে গেছেন তারা এই মহৎ কাজটি করতে পারেন। এটা সম্পুর্ণ নিরাপদ। ২০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার প্লাজমা দান করলে আপনার শরীরের কোন ক্ষতি হবে না বরং একজন রোগীর জীবন রক্ষা হতে পারে। শুধু তাই নয় এই গবেষণাটি পৃথিবীর একটি বিগ ট্রায়ালেও পরিনত হতে পারে যার মধ্যে আপনি অবদান রাখতে পারেন।

প্রাপ্তবয়ষ্ক ছেলে বা গর্ভবতী নন এমন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে দাতা, যার কোভিড-১৯ ইনফেকশন হয়েছিল এবং সেরে গেছেন, তারা এই প্লাজমা দিতে পারেন। প্লাজমা কেবল রক্তের জলীয় অংশ, সেখানে লোহিত কণিকা থাকবে না। ফলে শরীরের রক্ত কমে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।

এটা দিলে সাথে অনেকগুলো রক্ত পরীক্ষাও ফ্রিতে হয়ে যাবে। গ্রুপিং থেকে শুরু করে হেপাটাইটিসসহ অনেকগুলো রোগের পরীক্ষা করে আপনার প্লাজমা নেয়া হবে। ফলে আপনার কিছু উপকারও হবে।

যারা এরমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে সেরে গেছেন তারা চাইলে আরেকজনের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারেন।

যোগাযোগ করতে হবে:

১. ডা. কাশফিয়া ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ . কক্ষ নং ২৩৮, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

২. ডা এ বি এম আল মামুন
রেজিস্ট্রার
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ , ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ফোন - 01711349834 , ০১৭১১২৪৯৮৩৪

আশা করছি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন আমাদের সেরে যাওয়া রোগীরা। প্লাজমা দিয়ে কোভিড যুদ্ধে অন্য একজনকে বাঁচিয়ে প্রমাণ করবেন

সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

লেখক :ডা. আব্দুন নূর তূষার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।


পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন