যে দেশের মানুষ ১০০ ভাষায় কথা বলতে পারে

  27-07-2022 06:53PM


পিএনএস ডেস্ক : পূর্ব আফ্রিকার সার্বভৌম একটি দেশের নাম তানজানিয়া। ১৯৬৪ সালে তাঙ্গানিকা ও জাঞ্জিবার দেশ দুইটির একটি মিলিত ফেডারেশন হিসেবে তানজানিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়।

তাঙ্গানিকার "তান" এবং জাঞ্জিবারের "জান" শব্দাংশ দুইটি থেকে দেশটির নাম "তানজানিয়া" রাখা হয়েছে। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, জাতিগত বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই দেশটিতে প্রায় ১০০টির মতো ভিন্ন ভাষা প্রচলিত।

তানজানিয়ার উত্তরে কেনিয়া ও উগান্ডা, পূর্বে ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে মোজাম্বিক, মালাউই ও জাম্বিয়া এবং পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা।

ভারত মহাসাগরের জাঞ্জিবার ও পেম্বা দ্বীপ এবং আরো কিছু ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির সীমান্তের অন্তর্ভুক্ত।

তানজানিয়ার মোট আয়তন নয় লাখ ৪৫ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। দারুস সালাম দেশের বৃহত্তম শহর ও প্রশাসনিক রাজধানী। দেশটির আইন প্রণয়ন কেন্দ্র বর্তমানে ছোট শহর দোদোমাতে অবস্থিত। দোদোমাকে ভবিষ্যতে দেশের রাজধানী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তানজানিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি বনাঞ্চল বিশেষ দেশ। আফ্রিকার বনাঞ্চলের একটি বড় অংশই রয়েছে তানজানিয়াতে। আফ্রিকার সবথেকে উচু পর্বতও তানাজানিয়াতেই অবস্থিত।

এছাড়াও সেরেনগেটি ন্যাশনাল পার্ক যা হাতি, সিংহ, চিতা, বুন মহিষ ও রাইনোর জন্য বিশ্বখ্যাতি পেয়েছে, সেটিও তানজানিয়ারই একটি অংশ। মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, পেমবা আইল্যান্ড, তারানজিরে ন্যাশনাল পার্ক প্রভৃতি স্থানও পর্যটনের জন্য বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে।

তানজানিয়ার সমুদ্র সৈকতগুলোও দারুণ। মাফিয়া আইল্যান্ড ও জানজিবার বীচ পর্যটকদের কাছে তুমুল আকর্ষণের জায়গা। সারা পৃথিবী থেকে সারা বছরই পর্যটকেরা আসতে থাকেন এখানে।

প্রাক-ঐতিহাসিককালে দক্ষিণ ইথিওপিয়া থেকে এখানে এসে বসতি গড়ে চুসিটিকভাষী লোকেরা। এটি ২০০০ থেকে ৪০০০ বছর আগের কথা। তানজানিয়ায় ইউরোপীয় উপনিবেশ শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। জার্মানি এসে জার্মান পূর্ব আফ্রিকা গঠন করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। ঐ সময় মূল ভূখণ্ড তানজানিকা ও জানজিবার দ্বীপপুঞ্জ নামে দুটি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে পরিচালিত হতো। এ দুটি অংশ যথাক্রমে স্বাধীনতা পায় ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে। সংযুক্ত তানজানিয়া প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে।

তানজানিয়ায় শতাধিক ভিন্ন ভাষাভাষী রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে তানজানিয়ার অবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। তাদের অর্থনৈতিক আয়ের মূল ভিত্তি কৃষি, পর্যটন, টেলিকমিউনিকেশন ও ব্যাংকিং খাত। তানজানিয়ার মানুষের কাছে সমকামের বিয়েকে বলা হয়, হাউস অব উইম্যান। স্বামীর অবর্তমানে নারীরা নিজের জীবনকে উপভোগ করেন এই রীতির মাধ্যমেই।

তবে এই বিয়েতে এক নারী কখনই অন্য নারীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন না। বিধবা নারী অথবা সন্তান নেই এমন নারীরা চাইলেই তার বয়সের ছোট কোনো নারীকে বিয়ে করতে পারেন। এমনকি যদি ছোট বয়সের নারী নিজে অন্য পুরুষকে বিয়ে করেতে চান, সেটিও তিনি করতে পারবেন।

বলা বাহুল্য, বর্তমানের সমকাম ভাবনার প্রতিফলন তানজানিয়ার এই গ্রামে নেই। বরং এটি একটি আদি রীতি যা এখনও মেনে চলছে তানজানিয়ার মানুষ। মুসলিম পর্যটকদের জন্য তানজানিয়া এক অসাধারণ দেশ।

এর কারণ, এই দেশে প্রচুর মসজিদ। আর রাস্তার মোড়ে, অন্যান্য হোটেল রেস্তরাঁয় সহজে মেলে হালাল খাবার। তানজানিয়ার পবিত্র কোরআন চর্চারও দারুণ উদ্যোগ খেয়াল করা যায়।

প্রতি বছর এখানে আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি কৃষ্টি কালচারের উর্বর দেশ হিসেবেও তানজানিয়ার নাম চলে আসে এই সময়ে।

পিএনএস/আলাউদ্দিন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন