হাতবদলে বাড়ছে ইলিশের দাম, পাইকারি-খুচরায় বিস্তর পার্থক্য

  25-08-2021 01:01AM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে দামও কিছুটা কমেছে। তবে পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারের পার্থক্যটা বিস্তর। হাতবদলে পাল্টে যাচ্ছে মূল্য। খুচরা বিক্রেতারা বড় ইলিশের দাম হাঁকাচ্ছেন খেয়াল-খুশি মতো। মৌসুমে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে প্রতিদিন প্রচুর ইলিশের বিকিকিনি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই মাছ আসে এ বাজারে। আড়তদাররা জানান, গত দুদিনে

এ বাজারে ইলিশের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। মাঝারি ও ছোট ইলিশের আমদানিটাই বেশি। দামও অনেকটা কমেছে। বেড়েছে বিক্রিও।

যাত্রাবাড়ীর আড়তগুলোতে বড় ইলিশের (এক কেজির সামান্য বেশি ওজনে) দাম পড়ছে ৮০০ থেকে হাজার টাকা। মাঝারি আকারের (এক কেজির কিছুটা কম) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০



থেকে ৭০০ টাকায়। তুলনামূলক ছোট মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ একটু দূরেই অবস্থিত যাত্রাবাড়ী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা একই ইলিশ বিক্রি করছেন অনেক বাড়তি দামে। বাজার ভেদে পাইকারি ও খুচরায় সেই দামের ব্যবধান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। আড়তে এক কেজির একটু বেশি ওজনের যে ইলিশের দাম পড়ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা একই মাছের দাম হাঁকছেন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে এক কেজির কম (৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ওজনের একেকটি ইলিশ বিক্রি করছেন ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ সকালেই আড়তে যা বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

পাইকারি ও খুচরা দামে এত বড় ফারক কেন- জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে সত্য, তবে আশানুরূপ কমেনি। তা ছাড়া পরিবহন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি বরফের দামও এখন বাড়তি। ইলিশের পেছনে বরফ খরচ করতে হয় অনেক। সব মিলিয়ে দাম অনেকটা বেড়ে যায়।’ তবে পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের সততা মৎস্য ভা-ারের ব্যবসায়ী মো. আজম আলী জানান, আড়তে দাম কমলেও খুচরা বিক্রেতারা ইলিশের আকার বুঝে বাড়তি দাম হাঁকায়। তা ছাড়া বরফের দাম বাড়লেও প্রতিপিস ইলিশের দামে তার প্রভাব খুবই নগণ্য। সুতরাং বরফের কারণে খুচরায় ইলিশের দাম খুব একটা বাড়ার কথা নয়। তবে ভ্যান ভাড়া, পিকাপ ভাড়া বেড়েছে। এর ফলে খরচ বেড়ে যায় কিছুটা। তার পরও প্রতি পিস মাছে ৫০০ টাকা বাড়তি রাখা অযৌক্তিক। যাত্রাবাড়ী বাজারে ইলিশ কিনতে আসা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। কিন্তু দামে কোনো পরিবর্তন নেই। ছোটগুলোর দাম শুনেই রাগ হচ্ছে। বড় ইলিশে তো হাত ছোঁয়ানোই দায়। দাম শুনেই ইলিশ কেনার খায়েশ মিটে গেছে।’

এদিকে দাম যেন নাগালে থাকে সে জন্য এখনই ইলিশ রপ্তানি না করার পক্ষে মত দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। রপ্তানি হলে দেশের মানুষের পক্ষে সুস্বাদু ইলিশ খাওয়ার সুযোগ অনিশ্চিত হতে পারে উল্লেখ করে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ একেবারে প্রান্ত থেকে নগর পর্যন্ত সবারই খাওয়ার সুযোগ পাওয়া উচিত। রপ্তানি হলে বিশাল কোনো অর্থনৈতিক অর্জন হওয়ার মতো অবস্থা এ মুহূর্তে নেই। তাই বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে রপ্তানি হলে দেশের মানুষের সুস্বাদু ইলিশ খাওয়ার সুযোগটা অনিশ্চিত হতে পারে। সে জন্য ব্যক্তিগতভাবে ইলিশ রপ্তানির পক্ষে নই আমি।’

রপ্তানি না বন্ধ থাকলেও ইলিশের দামে স্বস্তি মিলছে না। কারওয়ানবাজারের আড়ত ও খুচরা বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। প্রতিদিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা কারওয়ানবাজারের মাছের আড়তগুলোতে ভিড় করেন। দাম কিছুটা কমায় আড়তে ইলিশের ক্রেতা বেড়েছে বলে জানান সেখানকার আড়তদার স্বপণচন্দ্র। তিনি জানান, এ বাজারে এক কেজি ১০০ থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের চাহিদাই বেশি। পাইকারিতে এ ইলিশের কেজি পড়ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত। এর চেয়ে তুলনামূলক বড় আকারের ইলিশ বিক্রি করছি এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। ৮০০ গ্রাম ওজনের একেকটি ইলিশের দাম পড়ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। অপরদিকে ছোট ইলিশের দাম পড়ছে ৪০০ টাকার মতো। এ ছাড়া জাটকা সাইজেরগুলোর দাম পড়ছে ২৭০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ানবাজারের মাছের বাজারে গিয়ে অবশ্য দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে এক কেজি ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ সকালে আড়তে একই ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়। জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, ‘ইলিশের মধ্যে প্রকার ভেদ আছে। চাঁদপুরের ইলিশের দাম অন্য ইলিশের চেয়ে বেশি। আমার কাছে যে ইলিশ রয়েছে তা চাঁদপুরের। তাই দাম একটু বেশি। ভালো খেতে হলে খরচ তো একটু বেশি করতেই হবে।’ তবে পাইকারি ব্যবসায়ী স্বপণ বলেন, ‘পাইকারিতে এক কেজি ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দামের ব্যবধান অনেক বেশি নয়। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বড় ইলিশের দাম অনেক হাঁকেন। তা ছাড়া অনেক খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সব ইলিশকেই চাঁদপুরের ইলিশ বলে বেশি দামে বিক্রি করার একটা প্রবণতা থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে চাঁদপুর হাটেই বিক্রি হয় অন্য অঞ্চলের ইলিশ। আর সেই ইলিশ চাঁদপুর হয়ে ঢাকায় এসে বিক্রি হয় চাঁদপুরের ইলিশ নামে। মাঝখান দিয়ে হাতবদলে বাড়তি মুনাফা করেন বেপারিরা।’

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন